আহমেদ রাজু : নাগরিক অধিকার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গা শরনার্থীরা মিয়ানমারে ফিরে যাবে না। সেখানে অবাধে কাজ করা, বিচরণ করা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত তারা সেখানে যেতে মোটেই আগ্রহী নন। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা অক্সফামের এক গবেষণা রিপোর্টে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। অক্সফাম কক্সবাজারের অস্থায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ২০০ শরনার্থীর সঙ্গে কথা বলে এ রিপোর্ট তৈরি করেছে। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে গতকাল বিকেলে এক অনুষ্ঠানে এ রিপোর্ট প্রকাশ করে অক্সফাম। রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠানে অক্সফামের রিজিওনাল ক্যাম্পেইন ম্যানেজার সুলতানা বেগম বলেন, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে গ্রুপ আলোচনা ও বিশদভাবে সাক্ষাৎতারের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে এ গবেষণা রিপোর্ট।
গবেষণা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, নিরাপদে বসবাসের পরিবেশ ও মানবাধিকারের শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের মিয়ানমারে জোর করে পাঠানো হলে, তারা আত্মহত্যা করবে। কারণ, তারা আর বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে চায় না। রিপোর্টে বলা হয়, রোহিঙ্গা নারীরা বেশি মানসিক ভাবে আঘাতপ্রাপ্ত। প্রিয়জনের মৃত্যু ও ধর্ষণের মতো দুর্বিসহ যন্ত্রণা তাদের পোহাতে হয়েছে। রোহিঙ্গারা যেখানে অস্থায়ীভাবে বসবাস করছে, সেখানেও তাদের অপহরণ ও যৌন হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয় রিপোর্টে।
জানুয়ারির শেষের দিকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে রাজি হয় মিয়ানমার। কিন্তু মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ পরিবেশ এখনোও তৈরি হয়নি। তাই জাতিসংঘ এই ক্ষেত্রে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে অক্সফামের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। শরনার্থীদের যে মানবিক সাহায্যের প্রয়োজন, সে বিষয়েও সাহায্য করতে পারে জাতিসংঘ।
কয়েকটি প্রস্তাবনাও তুলে ধরা হয়েছে অক্সফামের রিপোর্টে। কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের সুপারিশ করে মিয়ানমার সরকারকে সব ধরণের সহিংসতার অবসান ঘটানোর কথা বলা হয়েছে। মিয়ানমারের সব নাগরিকের সমঅধিকার নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যাবর্তন হতে হবে স্বেচ্ছাপূর্বক ও নিরাপদ। একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করে যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে যারা জমি হারিয়েছে, তাদের জমি ফেরতসহ প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বলে বলা হয়েছে।