ইসলামের দৃষ্টিতে কৃপণতা মুহাম্মাদ আবু আখতার
ইসলামের দৃষ্টিতে কৃপণতা অত্যন্ত অপছন্দনীয়। কৃপণ মানুষের কাছে যেমন ঘৃণিত তেমনি আল্লাহর কাছেও অত্যন্ত ঘৃণিত। আল্লাহ তায়ালা কৃপণদের জন্য অপমানজনক শাস্তি প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, যারা নিজেরা কৃপণতা করে এবং অন্যকেও কৃপণতার নির্দেশ দেয় আর যা আল্লাহ তা’আলা স্বীয় অনুগ্রহে তাদেরকে দান করেছেন তা গোপন করে এসব নাফরমানদের জন্য আমি অপমান জনক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। (সুরা নিসাঃ ৩২)
অনেকে কৃপণতা করাকে তাদের ভবিষ্যত জীবনের জন্য মঙ্গলকর মনে করে থাকে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটা তাদের জন্য মঙ্গলকর নয়। তারা আল্লাহর পথে এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ব্যয় না করে যেসব ধনসম্পদ জমা করে রাখে কিয়ামতের দিন সেসব ধন-সম্পদকে বেড়ি বানিয়ে তাদের গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আল্লাহ তাদেরকে নিজের অনুগ্রহে যা দান করেছেন তাতে যারা কৃপণতা করে এই কার্পন্য তাদের জন্য মঙ্গলকর হবে বলে তারা যেন ধারণা না করে। বরং এটা তাদের পক্ষে একান্তই ক্ষতিকর প্রতিপন্ন হবে। যাতে তারা কার্পন্য করে সে সমস্ত ধন-সম্পদকে কিয়ামতের দিন তাদের গলায় বেড়ী বানিয়ে পরানো হবে। আর আল্লাহ হচ্ছেন আসমান ও যমীনের পরম সত্ত্বাধিকারী। আর যা কিছু তোমরা কর; আল্লাহ সে সম্পর্কে জানেন। (সুরা আলি ইমরান-১৮)
যেসব সম্পদশালী আল্লাহর পথে ব্যয় করতে কার্পণ্য করে তারা এর দ্বারা প্রকৃতপক্ষে নিজের ক্ষতিই করে। আল্লাহ তায়ালা কারো সম্পদের প্রতি মুখাপেক্ষী নন। বরং সকলেই তার মুখাপেক্ষী। কেউ আল্লাহর পথে খরচ করতে কার্পণ্য করলে তাতে আল্লাহ তায়ালার কিছু আসে যায় না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরাই তো তারা, যাদেরকে আল্লাহর পথে ব্যয় করার আহবান জানানো হচ্ছে, অতঃপর তোমাদের কেউ কেউ কৃপণতা করছে। যারা কৃপণতা করছে, তারা নিজেদের প্রতিই কৃপণতা করছে। আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং তোমরা অভাবগ্রস্থ। যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তিনি তোমাদের পরিবর্তে অন্য জাতিকে প্রতিষ্ঠিত করবেন, এরপর তারা তোমাদের মত হবে না। (সুরা মুহাম্মাদ-৩৮)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, যারা কৃপণতা করে ও মানুষকে কৃপণতার প্রতি উৎসাহ দেয় এবং মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার জানা উচিত যে, আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসিত। (সুরা হাদীদ-২৪) যারা মনের কার্পণ্য থেকে মুক্তি লাভ করে মুক্ত হস্তে দান সাদকা করে আল্লাহ তায়ালা তাদের একাজকে কল্যানকর এবং তাদেরকে সফলকাম বলে ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর, শুন, আনুগত্য কর এবং ব্যয় কর। এটা তোমাদের জন্যে কল্যাণকর। যারা মনের কার্পন্য থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম। (সুরা তাগাবুন-১৬)
মদীনার আনসার সাহাবীগণ মনের কার্পণ্য দুরীভুত করে মুহাজিরদেরকে মুক্ত হস্তে সাহায্য করেছিলেন এবং নিজেদের প্রয়োজনের চেয়ে মুহাজিরদের প্রয়োজনকে বেশি গুরুত্ব দিতেন। তাই আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে সফলকাম হিসেবে ঘোষণা করেছেন, “যারা মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে মদীনায় বসবাস করেছিল এবং বিশ্বাস স্থাপন করেছিল, তারা মুহাজিরদের ভালবাসে, মুহাজিরদেরকে যা দেয়া হয়েছে, তজ্জন্যে তারা অন্তরে ঈর্ষাপোষণ করে না এবং নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও তাদেরকে অগ্রাধিকার দান করে। যারা মনের কার্পণ্য থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম।” (সুরা হাশর-৯) আল্লাহর পথে যারা খরচ করতে কার্পণ্য করে কিয়ামতের দিন তাদেরকে এজন্য অনেক আফসোস করতে হবে। তারা আবার এ দুনিয়াতে এসে দান সাদকা করার জন্য আকাঙ্কা করবে। কিন্তু তাদের সে আকাঙ্খা পুরণ করা হবে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি, তা থেকে মৃত্যু আসার আগেই ব্যয় কর। অন্যথায় সে বলবেঃ হে আমার পালনকর্তা, আমাকে আরও কিছুকাল অবকাশ দিলে না কেন? তাহলে আমি সদকা করতাম এবং সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। প্রত্যেক ব্যক্তির নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হবে, তখন আল্লাহ কাউকে অবকাশ দেবেন না। তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে খবর রাখেন। (সুরা মুনাফিকুনঃ ১-১১) আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে কৃপণতা হতে রক্ষা করুন এবং বেশি বেশি দান সাদকা করার তাওফিক দান করুন।