ইসলামের দৃষ্টিতে বিচার বিভাগ কেমন হওয়া চাই মুফতি মুজাহিদ সরকার
মানুষ স্বীয় শক্তি, বুদ্ধি, অর্থ ব্যায় করে যখন কোন বিষয় সমাধান করতে পারে না, একমাত্র তখনই সরনাপন্ন হয় বিচার বিভাগের। কিন্তু বিচার বিভাগে যে আশা-প্রত্যাশা, আকাঙ্খা, ব্যাথা নিয়ে যে বিচার পেতে চায়, তা কি আদৌ পায়? এর উত্তরে ইতিবাচক শব্দ প্রয়োগ অনেক লজ্জা জনক, তাই তার উত্তরে না বলা আবশ্যক। বরং যেই জুলুম-অত্যাচারের শিকার হয়ে উক্ত বিভাগের স্বরণাপন্ন হয়েছে তা থেকে আরো কঠিন জুলুমের শিকার হয়। এর প্রমাণ প্রতিনিয়ত আমরা সকলে অবলোকন করেই যাচ্ছি। বিচার বিভাগের জুলুমে আকাশ বাতাশ ভারি হয়ে থাকছে। এরই প্রমাণধারী ঘটনার মধ্যে একটি হচ্ছে মায়ানমারের আরাকান রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলিম জাতি নিধনের ঘটনা। যার উপর মুখ খোলার মত ছিল না কোন দেশিয় বিচার বিভাগ, ছিল না বিশ্ব বিচার বিভাগ। নিশ্চুপ! নিস্তব্দ, তাদের নিশ্চুপতা ও নিস্তব্দতা দেখে মনে হয়েছে, তারা রক্তে মাংসে সৃষ্ট কোন সত্তা নয় বরং পাথর বা পোড়া মাটির পুতুল। শুধু কি রোহিঙ্গাদের ঘটনা! না প্রতিনিয়ত এমন আরো বহু ঘটনা ঘটছে যার প্রত্যক্ষদর্শী কেউ হচ্ছে কিংবা হচ্ছে না। কিন্তু কখনো কি আমরা সুশিল সমাজ ভেবে দেখেছি উক্ত জুলুম ও অত্যাচার থেকে মুক্তির উপায় কি। না হয়তোবা এখনো ভাবা হয়নি। হ্যাঁ এ কারণেই তাহলে আমরা এখনো নির্যাতনের ঘুট ঘুটে অন্ধকারে নিমজ্জিত। এর একমাত্র কারণ হচ্ছে ইসলামী শিক্ষার অভাব, ইসলামিক বিষয়ে অন্ধত্ব। কারণ একমাত্র পৃথিবীর বুকে ইসলামই মানুষকে জুলুম থেকে মুক্তি দিয়ে সস্তির জীবন দান করেছে। যার দরুন অল্প কিছু দিনের ভিতর তার প্রশিদ্ধতা আরব আমীরাত সহ গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল। দলে দলে মানুষ ইসলামে দিক্ষিত হয়েছিল। এমনকি বিধর্মীরা পর্যন্ত সুসম বিচার পেতে দোজাহানের বাদশাহ, রহমাতুল লিলআলামীন ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্বরণাপন্ন হয়েছে। কারণ সকলে জানত সুবিচার পেতে হলে তার বিকল্প নেই। যুগে যুগে এরই রূপ মুসলমানরা ধরে রেখেছিল যার ফলে সুখ্যাতির সাথে ইসলামি রাষ্ট্রের বিস্তার হয়েছিল। আরব আমীরাত সহ ভারত উপমহাদেশ মুসলমানরা শাষণ করেছে। সোনালী যুগে অর্ধ পৃথিবী শাষণ করেছে মুসলমানরা। কেননা ইসলামী বিচার ব্যবস্থার সুনির্দিষ্ট ও সুনির্ধারিত নীতিতে পরিচালিত যা অনুস্বরণ করে বিচার ব্যবস্থা কায়েম করলে অবিচারের নূন্যতমও আশঙ্কা থাকে না। প্রত্যেক যুগে মুসলমানদের ইসলামী বিচারকদেরকে এরই শিক্ষা দান করা হয়েছে এর প্রতি উৎসাহ দেয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় যুগশ্রেষ্ঠ ইমাম, হানাফী মাযহাবের প্রণেতা ইমাম আযম আবূ হানীফা রহ. তার ¯েœহের ছাত্র হযরত নূহ বিন আবূ মারইয়ামকে বিচার বিভাগীয় বিষয়ে নি¤œ উপদেশমালা প্রদান করেন। তিনি বলেন: হে নূহ! মনে রাখবে যে, বিচার বিভাগীয় বিষয়াবলী অনুধবন করা ঐ সমস্ত বিজ্ঞ ও পারদর্শী আলিমদের কাজ শরীয়তের মৌলিক দলীল তথা যারা কুরআন, হাদীস ও সাহাবায়ে কিরামের উক্তি ও বর্ণনা সম্পর্কে অবগত আছেন। বিচক্ষণতা ও সঠিক মতামতের অধিকারী। গৃহীত সিদ্ধান্ত প্রয়োগ করার মত প্রভাব ও শক্তি রাখে। যদি তোমার জন্য কোন সমস্যা সমাধান কঠিন হয়ে পড়ে, তাহলে তা আল্লাহর কিতাবে, সুন্নাতে রাসুল (সা.) ও ইজমায় অনুসন্ধান করবে। তাতে সরাসরি স্পষ্ট সমাধান পাওয়া না গেলে তার নযীর তথা সমপরিমান মাসায়িলের উপর কিয়াস অনুমান করবে এবং উছুল (কুরআন, হাদীস ও ইজমা) দ্বারা এর পরোক্ষ প্রমাণ পেশ করবে। তোমার জ্ঞান-বুদ্ধি মতে যা কুরআন, হাদীস ও ইজমার সাথে বেশি মিল আছে মনে হবে সে মতে আমল করবে। তবে উক্ত ব্যাপারে আল্লাহ ওয়ালাদের সাথে পরামর্শ করবে। করণ তাদের মধ্যে এমন ব্যক্তিও থাকতে পারে যে উক্ত বিষয়ে এমন সমাধান পেশ করতে পারবে যা করতে তুমি অক্ষম। তাকওয়া তথা আল্লাহ পাকের ভয়-ভীতিকে সব কিছুর উপর প্রাধান্য দিবে। উল্লেখিত উপদেশ সমূহ দুনিয়া-আখেরাতে সফলতার জন্য যথেষ্ট। পরিশেষে দোয়া করছি আল্লাহ পাক যেন তোমাকে প্রশান্তি দান করেন এবং সকলকে পাক-পবিত্র ও সফল জীবন ও উচ্চ মর্যাদা দান করেন। আমীন!
লেখক: কলামিস্ট