গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত
মাসুদ রানা
যে ব্যক্তির কোনো ধারণা নেই ডলফিন কাকে বলে, তাকে হাঙ্গর দেখিয়ে ‘ডলফিন’ বললেও সে বুঝতে পারবে না যে তাকে ‘ডলফিন’ দেওয়া হচ্ছে না।
বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে প্রধানতম বাধা হচ্ছে জনগণের মধ্য গণতন্ত্রের ধারণা- শূন্যতা। অর্থাৎ, গণতন্ত্র কাকে বলে সে সম্পর্কে কার্যত কোনো ধারণা নেই জনগণের মধ্যে।
এমনকি গণতান্ত্রের জন্যে কথার অর্থে নিবেদিত ব্যক্তিদের মধ্যেও গণতন্ত্রের ধারণা নেই। কিন্তু রাজনৈতিক ক্ষমতা তথা সার্বভৌম ক্ষমতার ধারক কে কীভাবে হবেন, সেই ধারণা জনগণের মধ্যে রয়েছে গণতন্ত্র-পূর্ব যুগ ও ব্যবস্থার।
গণতন্ত্র-পূর্ব যুগ হচ্ছে রাজতান্ত্রিক যুগ। যেখানে সার্বভৌম ক্ষমতা থাকে রাজা তথা রাজ-পরিবারের হাতে বংশ-পরস্পরায়। বাংলাদেশে বাঙালি জাতির মধ্যে সেই পুরনো ধারণাই প্রায় অক্ষুণœ রয়েছে। যারা গণতন্ত্রের সঠিক অর্থ বুঝেন এবং তা একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে বাংলাদেশে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে চান, তাদের কর্তব্য হচ্ছে বাঙালি জাতির মধ্যে সার্বভৌমত্বের অধিকার সম্পর্কিত পুরনো ধারণা ভেঙে আধুনিক গণতান্ত্রিক ধারণা গড়ে তোলা। সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, জনগণ যে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক এবং ঈশ্বরের বা ঈশ্বরের আশির্বাদপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তির বা পরিবারের, এই ধারণাটা জনগণের চিন্তা ও বোধের পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। প্রকৃত গণতন্ত্রীরা যতক্ষণ না পর্যন্ত সার্বভৌম ক্ষমতায় শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমানের বংশগত উত্তরাধিকারের প্রত্যক্ষিত বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ধ্বংস না করছেন, ততোক্ষণ পর্যন্ত গণতন্ত্রের দিকে দেশ-জাতি-রাজনীতি এগুবে না; সেই একই খাড়া-বড়ি-থোড় এবং থোড়-বড়ি-খাড়া চলতেই থাকবে।
লন্ডন, ইংল্যান্ড/ফেসবুক থেকে