লড়াইটা জারি থাকুক
প্রভাষ আমিন
অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা সাড়ে ৪টায়। জ্যাম ঠেলে যেতে যেতে আমার বেজে যায় রাত ৮টা। ধানমন্ডি ৮ নাম্বার ব্রিজে ওঠার পর মুক্তিকে বললাম, কান পাতো তো, অনুষ্ঠান এখনো চলছে কিনা? আওয়াজ শুনে গাড়ি রেখে দ্রুত পৌঁছে চমকে গেলাম। বাইরে কয়েক হাজার মানুষের ভিড় দেখেই প্রথম চমক। রবীন্দ্র সরোবরের ভেতরে ঢুকে চমকটা বিস্ময়ে পরিণত হলো। কোনো আসন ফাঁকা নেই। অনুষ্ঠান শুরুর সাড়ে ৩ ঘণ্টা পরও ¯্রফে আবৃত্তি শোনার জন্য কয়েক হাজার মানুষের এসন উপস্থিতি আমার মন ভালো করে দেয়। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে হেফাজতের বিজয়, জঙ্গিবাদের উত্থান, ফেসবুকে সাম্প্রদায়িক শক্তির আস্ফালন দেখে মাঝে মাঝে মন খারাপ হয়ে যায়। তবে কি ৩০ লাখ শহীদের রক্তে পাওয়া এই বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কবলেই চলে যাবে? আমার সেই হতাশা কেটে যায় এক লহমায়। সাম্প্রদায়িক শক্তি যতই লাফালাফি করুক; একটি উদার, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন কখনো হারিয়ে যাবে না। মাঝে মাঝে কালো মেঘ ঢেকে দেয় বটে উদার আকাশ, তবুও মেঘ কেটে যাবেই, আঁধার কেটে আলো আসবেই। শিমুল মুস্তাফার ভক্ত আমি আমি।
আজ নয়, প্রায় তিন দশক ধরে। শিমুল ভাইকে আমি বলি নব্বইয়ের সন্তান। মুক্তিযুদ্ধের পর আমাদের জাতীয় জীবনে সবচেয়ে বড় অর্জন স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন। পুরো আশির দশকজুড়ে সে আন্দোলন প্রভাবিত করেছে আমাদের রাজনীতি, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি সব অঙ্গনকেই। মুক্তিযুদ্ধ করতে না পারা প্রজন্ম নিজেদের শানিত করেছে, প্রাণিত করেছে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে। তখন কবিতায় রাজনীতি, গল্পে রাজনীতি, আন্দোলনে রাজনীতি; সবকিছু রাজনীতিময়। আমরা প্রতিবাদ করেছি রাজপথে, কলমে, কণ্ঠে। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সৈনিকদের অনেকেই এখন আপোষের চোরাবালিতে হারিয়ে গেছেন। স্বৈরাচার এরশাদ এখন সরকাররে সঙ্গী, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। শিমুল মুস্তাফাকে ধন্যবাদ। তিনি এখনো ভুলে যাননি একাত্তরকে, ভুলে যাননি নব্বইকে। জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সবচেয়ে বড় অস্ত্র যে সুস্থ সংস্কুতি; সেটা আমরা অনেকেই ভুলে যাই। শিমুল মুস্তাফা ভুলে যাননি। প্রতিবছর ডিসেম্বরে ৭১টি কবিতা আবৃত্তির এই আয়োজন তাই আমার মন ভালো করে দেয়। অনুভব করি লড়াই এখন চলছে, চলবে। শিমুল ভাইয়ের মত ভরাট কণ্ঠ আরও অনেকের আছে। কিন্তু তাদের সবাই আবৃত্তিকার নন। বন্ধু জ. ই. মামুন বলে দিয়েছেন আসল কথাটি- শিমুল ভাই আবৃত্তি করেন হৃদয় থেকে। তার প্রতিটি কথা উঠে আসে অন্তরের গভীর থেকে। তাই তো তা অনুরণন তোলে শ্রোতার অন্তরেও। তাই তো নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও রবীন্দ্র সরোবরে বসে থাকেন বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কামরুল হাসান খানের মতো ব্যস্ত মানুষকেও। সবচেয়ে বড় যেটা, সাড়ে চারঘণ্টারও বেশি সময় ধরে একটানা আবৃত্তি করে যাওয়া কম কথা নয়। তার স্ট্যামিনা দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে যাই। অভিনন্দন প্রিয় শিমুল মুস্তাফা। লড়াইটা জারি থাকুক। আমরা ছোট সৈনিকরা আছি আপনার পাশে।
পরিচিতি : হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ
ফেসবুক থেকে