‘সরকার পাকিস্তানি কায়দায় দেশ চালাচ্ছে’ শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না : খালেদা জিয়া
সংসদ অকার্যকর বলায় প্রধান বিচারপতিকে অপসারণ করা হলো
কিরণ সেখ : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়ার দাবি করে বলেছেন, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে নির্বাচন সম্ভব নয়। বিএনপি নেত্রী বলেন, প্রধান বিচারপতি এই সংসদ অকার্যকর কোনো জবাবদিহিতা নাই বলেছিলেনÑ তাই তাকে অপসারণ করা হলো। গতকাল জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত রাজধানীর গুলিস্তান মহানগর নাট্যমঞ্চে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে নির্বাচন হতে পারে না। নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে। বিএনপি অশান্তি চায় না। নির্বাচন করতে চায়। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় যেতে চায়। তিনি বলেন, দেশকে আওয়ামী লীগের শৃঙ্খলমুক্ত হতে হবে। এ জন্য আরেকবার জেগে উঠতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অন্য দলগুলোর উদ্দেশে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, আসুন, আপনারা আমরা সমান ভুক্তভোগী। সবাই মিলে একসঙ্গে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করি। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি।
এসময় দলের নেতাকর্মীদের নির্বাচন ও আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আগামী দিনে যে কর্মসূচি আসবে সে কর্মসূচির জন্য প্রস্তুত হতে হবে। আন্দোলন ও নির্বাচন সবকিছুর জন্য প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
গুম-খুন পরিস্থিতিসহ নানা ইস্যুতে সরকারকে দায়ী করে খালেদা জিয়া বলেন, প্রধান বিচারপতিকে তার এজলাসে আর বসতে দেওয়া হলো না। বাড়িতেও বন্দি করে রাখা হয়েছিল। তার অপরাধ এই সরকারের অপরাধ নিয়ে তিনি সত্য কথা বলেছেন। এই সংসদ অকার্যকর কোনো জবাবদিহিতা নাই বলেছিলেন। তাই তাকে অপসারণ করল। তাকে দেশের বাইরে যেতে বাধ্য করা হলো। তার স্ত্রীকে যেতে দেওয়া হলো না। বিদেশেও তাকে নানাভাবে হয়রানি করা হলো। প্রধান বিচারপতি হিসেবে যে সম্মানটুকু পাওয়ার তাও দেওয়া হয়নি। তিনি দেশে আসতে চেয়েছিলেন কিন্তু তাকে জোর করে ইস্তফা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মাঠে গিয়ে ভোট চাচ্ছে আর আমরা ঘরে বসেও সমাবেশ করতে পারব না এটাতো কখনও হতে পারে না। স্বাধীন দেশ আওয়ামী লীগের জন্য আজকে আমরা পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ। কাজেই আওয়ামী লীগের শৃঙ্খলমুক্ত হতে হবে।
পাকিস্তানি কায়দায় দেশ চলছে মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া সবার দাবি সবার অংশগ্রহণে আমরা নির্বাচন চাই। আমাদের দাবি নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে তা হবে না।
রাষ্ট্রীয় কর্মসূচিতে বিএনপি দাওয়াত পায় না জানিয়ে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধাদেরও এসব প্রোগ্রামে দাওয়াত করা হয় না। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সচিবালয়ে রাতের অন্ধকারে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ভালো ভালো অফিসারদের দিনের পর দিন বছরের পর বছর ওএসডি করে রাখা হচ্ছে। একসময় তাদেরকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। একই অবস্থা পুলিশেও। ভালো অফিসারদের পদোন্নতি না দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
প্রতিনিয়ত গুম, খুন হচ্ছে দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, কেউ সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বললে, জবাবদিহি চাইলে সরকার গুম করছে, মামলা দিয়ে কারাগারে দিচ্ছে। গুম হওয়ার পর যারা ফেরত আসছেন, তারা কোনো কথা বলছেন না। কারণ, তাদের বলে দেওয়া হয়েছে ফিরে এসে কিছু বললে পরবর্তী ফল ভালো হবে না।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আজকে চালের কেজি ৭০ টাকা, ডাল ১০০ টাকা, পিয়াজ ১৪০ টাকা, রসুন ৩০০ টাকা এবং ৬০ টাকা নিয়ে সবজি পাওয়া যায় না। সুতরাং মানুষের কিনে খাওয়ার ক্ষমতা নেই। ভাতই খেতে পারবে না! ঘাটে ঘাটে শ্রমিকদের আওয়ামী লীগকে চাঁদা দিতে হয়। ফলে তাদের আর কিছু থাকে না। তাদেরও খেতে হবে। কিন্তু এদিকে সরকারের কোনো নজর নেই। শুধু বাজে ও মিথ্যা কথা বলে তারা। চুরি করে তারা আর দোষ দিবে বিএনপিকে। এ অবস্থায় দেশ চলতে পারে না- বলেন তিনি।
মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রতিবেশী ভারতের অনেক অবদান ছিল উল্লেখ করে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমাদের আশ্রয় দিয়েছে। নানাভাবে সহযোগিতা করেছে। যুদ্ধ শেষে আমাদের জনগণ দেশের টানে ফিরে এসেছিলেন।