প্রধানমন্ত্রী, বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে হবে কেন?
‘বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে হবে। বিএনপি ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না’Ñএ ধরনের কথা প্রায়ই শোনা যায়। এমনকি গণভবনে অনুষ্ঠিত প্রায় সব সংবাদ সম্মেলনে এদেশের মুরব্বি সম্মানিত সাংবাদিকেরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এ জাতীয় প্রশ্ন করে থাকেন। যথারীতি প্রধানমন্ত্রীও এর উত্তর দেন। তিনি তো ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী লীগের সভাপতি। তবে তার জবাবে অনেক প্রশ্নকর্তা খুশি হন নাÑ তাদের মুখ দেখে বোঝা যায়।
আমরা যারা ‘ওয়ার্কিং জার্নালিস্ট’ তারা অনেক ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছি এদেশে। বেশিদিন আগের কথা নয়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ঘিরে ঝঞ্জাবিক্ষুব্ধ মানুষের ক্ষোভের কথা কী মনে নেই আমাদের? বাসের ভেতর পেট্রল বোমা নিক্ষেপ। শত শত মানুষকে হত্যা। মানুষ- পশু-গাছ-হত্যা কী হয়নি। এগুলো কী আন্দোলন? রাস্তায় নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের অপরাধ কী? তাকে পুড়ে মরতে হবে কেন? পুলিশের ওপর বোমা নিক্ষেপ করা, তাকে আক্রমণ, মিডিয়ার কর্মীদের ওপর, সাংবাদিকের ওপর আক্রমণ, রাজনীতির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই এমন মানুষের ওপর আক্রমণ কেন হয়েছিল। আন্দোলনের নামে কী তা-ব হতে পারে? আমার পত্রিকার সম্পাদকের মাঠে যেতে হয় না, যেতে বলছিও না, কোনো সম্পাদকই যাওয়ার কথা নয়। আমরা খবর এনে দিই বরং তারা আমাদের দেওয়া তথ্যগুলোই মনোযোগ দিয়ে শুনেন, কখনো প্রশ্ন করেন, ‘ক্রসচেক’ করার পরামর্শ দেন। ‘ওয়ার্কিং জার্নালিস্ট’ হিসেবে আমাদেরই মাঠে কাজ করতে হয়েছে এবং হয়।
বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য নানা রকম পরামর্শ দেওয়া হয় রাতের টিভির ‘টক শো’ গুলো থেকে। ২০১৩ থেকেই এই ‘সাবজেক্ট’ শুরু। অনেকের প্রশ্ন, এ নির্বাচনে দাওয়াত দিয়ে কাউকে আনতে হবে কেন? এটা কী প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে কারও ‘বিয়ের অনুষ্ঠান’? যে বিয়েতে তার অংশগ্রহণ না থাকলে শোভা বাড়বে না অনুষ্ঠানের! প্রতিবেশী দেশ ভারতেও বিজেপি আর কংগ্রেসের মধ্যে ‘সাপ-নেউল’ সম্পর্ক। কিন্তু লোকসভা বা বিধান সভার নির্বাচন হোক অর্থাৎ কোনো নির্বাচনই প্রতিহত করার ঘোষণা কোনো দল দেয় না। অথচ এদেশে প্রতিহতের ঘোষণা হয়। আমার ক্ষুদ্র একটি অভিজ্ঞতা ‘শেয়ার’ করতে চাই। জেএসডি নেতা আ স ম রব-এর কথা দিয়েই শুরু করি। তখন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের গৃহপালিত বিরোধী দলীয় নেতা তিনি। কোনো দলই যখন নির্বাচনে আসছে না তখন এরশাদ ‘ফিট’ করলেন তাকে। ৮৮ সালে সংসদ হোস্টেলে তার কক্ষে দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নিয়েছি। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা, সংগ্রামী জীবন তার। অসংখ্য প্রশ্নের জবাবের পর শেষ একটি প্রশ্নের জবাব এভাবে বললেন, ‘মানুষ হত্যা করে কী গণতন্ত্র রক্ষা করা যাবে? গণতন্ত্র তো টিকিয়ে রাখতে হবে!’ ৮৮ থেকে ২০১৭ অনেক ফারাক। ৭৫ এর পর স্বাধীনতা বিরোধীদের বারবার দেশের ক্ষমতায় বসানোর চক্রান্তের কথা, মন্ত্রী-এমপি বনানোর কথা মনে রাখা দরকার প্রতিটি নাগরিকের। গ্রামে গিয়ে দেখা যায় তৃণমূলের জনগণ সন্ত্রাস চায় না, সম্প্রীতি ও শান্তি চায়। শুধু গ্রামে কেনÑ সর্বত্র। যে ব্যক্তি অর্থবিত্তে সর্বশক্তিমান হয়েও নিচে নেমে সাধারণের কাতারে দাঁড়াতে পারে; জনগণ বিশ^াস তাকে করে সে-ই প্রকৃত মানুষ। মানুষের প্রতি বিশ^াস, আস্থা, ¯েœহ, অগাধ ভালোবাসার কারণে এদেশে স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব হয়েছে। সুতরাং বিশ^াস আগে অর্জন করা দরকার। বিএনপি তা খুইয়ে ফেলেছে বহু আগেই। দেশ চালানো নেতাদের অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা দরকার। হিংসা-বিদ্বেষ নয়, খুন বা অপহরণ নয়, পরস্পরকে সম্মানজনক মর্যাদা দান করতে ভুলে যাওয়া দল বিএনপি পুনরায় ক্ষমতায় আসবেÑ একথা যারা বিশ^াস করেন তারা তো বোকার স্বর্গে বাস করেন। বিভেদের নয়, একতা ও মিলনের সমাজ গড়ে তুলতে চায় মানুষ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু তা পেরেছিলেন; অন্যরা নয়।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গল্পকার