আহমেদ রাজু : শিক্ষা অধিদফতরের কর্মকর্তাদের সহনীয় মাত্রায় ঘুষ গ্রহণের পরামর্শ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদের বক্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্টজনেরা ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করেছেন। অবশ্য কেউ কেউ এটাকে সত্যভাষণও বলেছেন। বিএনপি বলছে, শিক্ষার্থীদের জন্য তার বক্তব্য এক ভয়ঙ্কর বার্তা। এই বক্তব্য দুর্নীতিকে উৎসাহিত করবে। এদিকে গতকাল মন্ত্রীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ব্যাখ্যা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেছেন, শিক্ষা খাতের দুর্নীতি সর্বজনস্বীকৃত। এমন তো নয় যে এই খাতে দুর্নীতি নেই। কেউ তো দুর্নীতির কথা স্বীকার করেন না, তিনি করেছেন। এটি তার সরল স্বীকারোক্তি। তাই তার বক্তব্য নিয়ে হইচই করার কিছুই নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেছেন, শিক্ষামন্ত্রী একসময় সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা আন্দোলনের নেতা ছিলেন। তার নেতৃত্বেই আমরা মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও বৈষম্যহীন শিক্ষার জন্য আন্দোলন করেছি। ঘুষ উৎসাহিত হতে পারেÑ তার মুখ দিয়ে এমন কথা আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। তার এই বক্তব্য আমি ক্ষুব্ধ ও হতভম্ব।
অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুুরুল ইসলাম বলেছেন, শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্নীতি এখন ভয়াবহ। সরকারের যত প্রতিষ্ঠান আছে, এর মধ্যে সবচেয়ে দুর্নীতিস্ত হচ্ছে শিক্ষা খাত। শিক্ষামন্ত্রীর অনেক স্বপ্ন ছিলÑ তিনি পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্নীতিমুক্ত করবেন। তিনি তা পারেননি। তাই তিনি খুব হতাশা থেকে কথাটি বলেছেন। তার কথায় দুর্নীতি উৎসাহিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, শিক্ষামন্ত্রীর কথায় প্রমাণিত হয় বর্তমান সরকার আত্মস্বীকৃত চোর ও দুর্নীতিবাজ। দেশে যে জঙ্গলের রাজত্ব চলছে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। তার বক্তব্য জাতির হৃদয়ের স্পন্দনকে থামিয়ে দেওয়ার শামিল। দেশে বিদ্যমান নৈরাজ্যকর অমানিশার মধ্যে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দেশের জন্য আরও ভয়াবহ উদ্বেগ, ভয় ও বিপদের কারণ হতে পারে।
গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক ব্যাখ্যায় বলা হয়, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের (ডিআইএ) অতীতের বক্তব্য বা তুলনাকে বর্তমানের কথা ধরে নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে, যা দুঃখজনক, বিভ্রান্তিকর ও শিক্ষামন্ত্রীর মূল বক্তব্যের বিপরীত ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বর্তমান নীতির পরিপন্থী। শিক্ষামন্ত্রী এ অধিদফতরের অতীতের/৮ বছর আগের উদাহরণ দিতে গিয়ে ডিআইএর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির কথা তুলে ধরেন। মন্ত্রী ঘুষ-দুর্নীতি বিষয়ে ডিআইএসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্থার প্রতি জিরো টলারেন্স নীতি স্মরণ করিয়ে দেন। তবে ব্যাখ্যায় তার বক্তব্যকে অস্বীকার করা হয়নি।