ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রহ.)
সৈয়দ রশিদ আলম
মহান রাব্বুল আলামিন যুগে যুগে মানুষকে সিরাতুল মুস্তাকিমের পথে পরিচালিত করার জন্য মহা পুরুষ পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। যাদের কাজ ছিল পবিত্র কুরানুল কারীম এর শিক্ষা ও সর্বকালের সর্বসেরা মানব হযরত মোহাম্মদ (স.) আদর্শ সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া। এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আল্লাহর প্রিয় বান্দারা সীমাহীন দুঃখ কষ্টের মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু তারপরও তারা সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হননি। তারা জানতেন মহান আল্লাহ পাক ধর্যশীলদের সাথেই থাকেন। আর যারা ধর্যশীল তাদেরকে মহান আল্লাহ পাক সম্মানিত করে থাকেন। সারা পৃথিবীতে এমন কিছু মহা পুরুষ জন্ম নিয়েছিলেন যারা মানুষকে আলোর পথে নিয়ে গিয়েছিলেন। যেমন ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রহ.), ইমাম আবু হানিফা (রহ.), ইমাম মালেক (রহ.), ইমাম শাফি (রহ.)সহ অগনিত বুজুর্গো। সারা পৃথিবীতে এই চার মহা পুরুষের নামে চারটি মাজহাব তৈরি হয়েছে। মূলত কুরানুল কারীম ও রাসুলপাক (স.) পরিপূর্ণ জীবন দর্শনটাই হচ্ছে মাজহাব। মধ্যপ্রচ্যের দেশগুলোতে ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রহ.) এর আদর্শকে অনুসরণ করা হয়। যে কারণে আরব অঞ্চলের বাসিন্দারা হাম্বলি মাজহাবের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রহ.) ১৬৪ হিজরি/৭৮০ খ্রিস্টাব্দে তিনি বাগদাদ নগরীতে জন্ম গ্রহণ করেন। সেখানে তিনি আইন, হাদীস ও অভিধানশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করেন। সেখানে তিনি কিছুদিনের জন্য ইমাম আবু হানিফা’র (রহ.) প্রধান ছাত্র ও সে সময়ের প্রধান বিচারপতি ইমাম আবু ইউসুফের শিক্ষালয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন। বাগদাদে তিনি ছিলেন ইমাম শাফিয়ি’র (রহ.) বিশ্বস্ত ছাত্র। এরপর তিনি হাদিস শাস্ত্রের দিকে মনোযোগ দেন। বিশুদ্ধ হাদিসের সন্ধানে তিনি দুর্গম যেমন : কুফা, বসরা, মক্কা, মদীনা, মরক্কো, সিরিয়া, ইয়েমেন, আলজেরিয়া, ইরান এ ভ্রমন করেন। সেখান থেকে তিনি প্রচুর তথ্য সংগ্রহ করেন। সুফ্ইয়ান ইবনু ইয়াইনা, ইয়াহ্ইয়া ইবনু সাঈদ কাত্তান ও ওয়াকি ইবনুল র্জারাহ প্রমুখ বিখ্যাত ব্যক্তিদের কাছ থেকে সহীহ্ হাদীস পাঠ করেন। তার নিকট থেকে হাদীস বর্ণনাকারীদের মধ্যে মুহাম্মদ ইবনু ইদরীস শাফিয়ি, ইমাম বুখারি, ইমাম ইমাম মুসলিম ও ইমাম আবু দাঊদ এর নাম উল্লেখযোগ্য। সে সময়ের শাসক বর্গরা তার উপর সীমাহীন অত্যাচার চালিয়ে ছিলেন। একই ঘটনা সমস্ত ইমামদের জীবনী পাঠ করলে দেখতে পাওয়া যায়। কারণ যারাই মহান আল্লাহ্ ও তার রাসুল (স.) এর বানী পৌঁছে দিয়েছেন তাদেরকেই মানব সৃষ্ট সমাজ সহজ ভাবে মেনে নিতে পারেনি। তিনি ছিলেন ব্যক্তিগত জীবনে একজন সাধক ব্যক্তি। জ্ঞান আহরণ করা ছাড়া অন্যকিছু তিনি ভাবতেই পারতেন না। এই মহা পুরুষকে নিয়ে ইমাম আবু দাঊদ সিজিস্তানি (রহ.) বলেন- ‘আমি দুই শতাধিক বিজ্ঞ মানুষের সাক্ষাৎ পেয়েছি, তবে ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রহ.) এর মতো আর কাউকে দেখিনি। তিনি সেসব আলোচনায় যোগ দিতেন না, যেখানে জ্ঞান চর্চার কোনো আলোচনা না হয়। তিনি তৎকালীন শাসক বর্গের সবধরনের উপহার উপঢোকন সবসময় প্রত্যাখ্যান করতেন। কায়িক পরিশ্রম দ্বারা যে অর্থ উপার্জন হতো এবং লেখা লেখি করে যেটুকু অর্থ তিনি পেতেন তা দিয়েই তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন। তিনি উপহার নেওয়ার চাইতে দেওয়াটাকে গুরুত্ব বেশি দিতেন। সকাল সন্ধ্যায় পরম করুনাময় এর দরবারে সেজদাহ্ করাকে জীবনের সবচাইতে বড় বিষয় মনে করতেন। তিনি একাধিক পুস্তক রচনা করেছেন এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে- আল-মুসনাদ, আর-রাদ্দু আলায-যানদিকাহ, কিতাবুয যুহ্দ। এর মধ্যে ‘আল-মুসনাদ’ কিতাবে হাদীসশাস্ত্রে এ বিশ্বকোষটিতে তিনি প্রায় উনত্রিশ হাজার হাদীস সংকলন করেছেন। তিনি ছিলেন একজন সুবক্তা। হাদীশাস্ত্রের সাথে সাথে আইনের জটিল বিষয়ের উপর নিয়মিত জবাব দিতেন। তিনি ছিলেন চলমান জ্ঞান সাগর। তিনি সবসময় বলতেন যা হযরত আবূ হুরায়রা (রহ.) বর্ণিত, ‘দুনিয়া মুমিনের জন্য জেলখানা, আর কাফিরের জন্য জান্নাতস্বরূপ’। ২৪১ হিজরি/৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি দুনিয়ার মায়া পরিত্যাগ করে মহান রাব্বুল আলামিনের চিরপবিত্র দরবারে চলে যান। ইরাকের রাজধানী বাগদাদে এই মহা পুরুষের কবর রয়েছে। বিশ্ববাসীর কাছে এই মহা পুরুষকে পরিচিত করার জন্য সবচাইতে বেশি যিনি অবদান রেখেছিলেন তিনি হলেন আরেক মহা পুরুষ ইমাম তাইমিয়া (রহ.)।
লেখক : কলামিস্ট
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ