শাহরিয়ার কবির
রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের সাথে মিয়ানমার সরকারের যে একটি সমঝোতা চুক্তি হয়েছে, সেটি জানুয়ারী থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। এখন পর্যন্ত আমরা এটির ফলাফল ইতিবাচক হবে বলে মনে করছি। তবে মিয়ানমার সরকার যেভাবে গড়িমসি করছে এবং আরও নতুন নতুন সমস্যা তৈরি করছে, তাতে আমি মনে করি, আন্তর্জাতিকভাবে আরও একটি জোরালো জনমত হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে আমাদের সরকারের পাশাপাশি নাগরিক সমাজেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে। সরকার কূটনৈতিকভাবে কাজ করবে আর নাগরিক সমাজ তাদের নিজেদের যোগাযোগ ব্যবস্থায় মিয়ানমারের নাগরিক সমাজের সাথে কথা বলবে। আর আন্তর্জাতিকভাবে ভারতের নাগরিক সমাজ মিয়ানমারের নাগরিক সমাজের সাথে এই বিষয়টি নিয়ে ভালোভাবে কাজ করতে পারে। তাদের যদি আমরা ফিরে যেতে ব্যবস্থা করতে না পারি, তাহলে আমাদের দেশের যে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো আছে, তারা রোহিঙ্গাদের যুক্ত করে ফেলবে। কারণ, রোহিঙ্গারা এখন মরিয়া অবস্থায় আছে। সব কিছু হারিয়ে এখন যে যা বলবে তাই করবে। এর মধ্যে সরকার তিনটি এনজিওকে নিষিদ্ধ করেছে, যেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে না যায়। জামায়াততো এটিকে পুঁজি করার চেষ্টা করছে। যখন তারা বিএনপির সাথে ক্ষমতায় ছিল, তখন প্রায় ১ লাখ রোহিঙ্গাকে ভোটার আইডি কার্ড দিয়েছিল। বর্তমান সরকার এসে এগুলোকে বাদ দিয়েছে। সরকার আরাকানে তাদের পুনর্বাসনের জন্য ঘরবাড়ি করার উদ্যোগ নিয়েছে। ভারত সরকার এ ব্যাপারে সহযোগিতা করবে । তুরস্কও এব্যাপারে সহযোগিতা করতে আগ্রহী। তবে এটিতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আমাদের সজাগ থাকতে হবে রোহিঙ্গাদের যেন কেউ রাজনৈতিক পুঁজি করতে না পারে। তাদের যেন জঙ্গী, সন্ত্রাসী , মৌলবাদী কার্যকলাপের সাথে যুক্ত করতে না পারে সেটিও নজর রাখতে হবে। তারা যদি এসব কাজে জড়িয়ে যায় তাহলে শুধু বাংলাদেশ নয় গোটা দক্ষিণ এশিয়ার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। তবে তারা যে আমাদের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছে এটিও ঠিক। কারণ, বিভিন্ন দেশ প্রথম প্রথম যেভাবে সাহায্য করেছে, এখন আর সেভাবে করছে না। এজন্য এটি স্থায়ী সমস্যা হতে পারে না। আমরা তাদের স্থায়ীভাবে রাখতে পারব না। এটির সমাধান করতেই হবে। না হলে, তাদের জন্য পরিবেশের উপর এখন মারাত্বকভাবে যে প্রভাব পড়েছে, সেটিও বাড়বে। প্রতিদিন তাদের থাকার জন্য গাছপালা কাটতে হচ্ছে, পাহাড় কাটতে হচ্ছে। যার জন্য বণ্যপ্রাণীদের জন্য একটি পরিবেশগত হুমকি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের জন্য আমাদের যারা দিনমজুর তারা কাজ পাচ্ছে না। কারণ, যে কাজ আমাদের দিনমজুর ৫০০ টাকা দিয়ে করত, এটি রোহিঙ্গারা মাত্র ১৫০ টাকা দিয়ে করছে। ফলে আমাদের দিনমজুরদের কাজের জন্য বসে থাকতে হচ্ছে। তাদের কারণে পর্যটন শিল্পের উপর একটি প্রভাব পড়েছে। তার চেয়ে বড় কথা, তাদের মধ্যে অনেকে নানারকম অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের যতদিন রাখা হবে, দিন দিন তত সমস্যা হতেই থাকবে। তাই এটির একটি সঠিক সমাধানের জন্য সরকারকে আন্তর্জাতিকভাবে সাহায্য নিতে হবে।
পরিচিতি : সভাপতি, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি
মতামত গ্রহণ : গাজী খায়রুল আলম
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ