জালিমের কারাগারে ইমাম বুওয়াইতি (রাহ.) মাহফুয আহমদ
যুগে যুগে ইসলামের অনেক মহামনীষি এসেছেন। তাদের দেখে পরবর্তীরা উত্তম আদর্শ গ্রহন করে থাকে। কিন্তু তাদের জীবনচিত্র অতটা সুখের ছিল না। জালিমের রক্তশূল হয়ে কারাবরণ করেছেন অনেক মনীষি। তাদের মধ্যে অন্যতম ইমাম বুওয়াইতি রাহ.। তার পূর্ণ নাম সায়্যিদুল ফুকাহা আবু ইয়াকুব ইউসুফ ইবনে ইয়াহইয়া আল মিসরি আল বুওয়াইতি । তিনি ছিলেন শাফিয়ি মাযহাবের ইমাম শাফিয়ি (রহ.) এর অন্যতম শিষ্য। জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় ছিলেন একজন মহান প-িত এবং আমল ও আখলাকের ক্ষেত্রে ছিলেন এক অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব। সর্বদা অধ্যয়ন ও অধ্যাপনায় নিমগ্ন থাকতেন। রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ বাদ যেত না। দুনিয়া বিমুখ এক মহান সাধক ছিলেন তিনি। ইরাকে ২৩১ হিজরিতে জালিম সরকারের কারাগারে তিনি শাহাদাত বরণ করেন।
প্রখ্যাত ইতিহাসবেত্তা ইবনে সুলায়মান আল মুরাদি (রহ.) বলেন, বুওয়াইতির ঠোট সর্বদা আল্লাহর জিকরে সচল ও সতেজ থাকত। কোরআন থেকে প্রমাণ উদঘাটনে তাঁর থেকে অধিক পারদর্শী আর কাউকে আমি দেখি নি।
আমি তাঁকে দেখেছি খচ্চরের উপর, তাঁর গলায় তখন বেড়ি পরানো, পাঁয়ে দড়ি বাধা, বেড়ি ও দড়ির মাঝে লোহার শিকল লটকানো। আর তিনি সজোরে বলছেন, খলিফা ওয়াসিক বিল্লাহের সামনে আমাকে নেওয়া হলেও আমি সত্য কথা বলতেই থাকব। কোরআন আল্লাহর কালাম, কোনো মাখলুক নয়। এক্ষেত্রে আমি কোনো আপোষ করব না। এমনকি প্রয়োজনে এই শৃঙ্খলেই আমার মৃত্যু হবে। যাতে পরবর্তীপ্রজন্ম জানতে পারে যে, সত্য প্রমাণে আমি শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকাবস্থায় আমার প্রাণ বিসর্জন দিয়েছি।
আরেক ঐতিহাসিক সাজি (রহ.) বলেন, বন্দীশালায় থাকতে বুওয়াইতি প্রতি জুমাবার গোসল করতেন, খুশবু ব্যবহার করতেন, কাপড়চোপড় ধুইতেন। তারপর আজান শুনে জেলখানার সদর গেইট পর্যন্ত যেতেন। কারারক্ষীরা তাঁকে ফিরিয়ে দিত। তখন বুওয়াইতি ফরিয়াদ করতেন, ‘ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার প্রতি আহবানকারী (মুয়াজ্জিন) এর ডাকে সাড়া দিয়েছি, এরা আমাকে আটকে রেখেছে।
আবু আমর মুসতামলি (রহ.) বলেন, আমরা মুহাদ্দিস মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াহইয়া জুহলি (রহ.) এর মজলিশে হাজির হলাম। তিনি আমাদেরকে তাঁর প্রতি লেখা বুওয়াইতির চিঠি পড়ে শোনালেন। চিঠিতে ছিল, আমি আপনার নিকট অনুরোধ করছি যে, আপনি আমার অবস্থা হাদিসবিদদের কাছে পেশ করবেন, হয়তো তাঁদের দোয়ার বদৌলতে আল্লাহ তায়ালা আমাকে মুক্ত করবেন। কেননা আমি লোহার শৃঙ্খলে বন্দী। ফারায়েজ যেমন তাহারাত, সালাত ইত্যাদি আদায় করা থেকেও আমি অক্ষম হয়ে পড়ছি। তা শুনে লোকেরা চিৎকার করে উঠল এবং সবাই দোয়া করল।
আল্লামা তাজ উদ্দিন সুবকি (রহ.) বলেন, এই মহান জ্ঞানতাপসের প্রতি লক্ষ্য করলে দেখা যায়, তাঁর আফসোস ছিল শুধু ফারায়েজ আদায় করতে না পারার। যেন বন্দিত্ব ও বন্দীশালা নিয়ে তাঁর তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই। আল্লাহ তাঁর ওপর সন্তুষ্ট হোন এবং তাঁর এ অবর্ণনীয় ত্যাগ ও ধৈর্যের উত্তম বিনিময় দান করুন। (সূত্র :তাবাকাতুশ শাফিয়িয়্যাহ আল কুবরা; তাজ উদ্দিন সুবকি, ২/১৬৫-১৬৬, সিয়ারু আলামিন নুবালা; শামসুদ্দিন যাহাবি, ১২/৫৯)