ধর্মের নামে অপব্যাখ্যার সুযোগ নেই
মু. ইলিয়াস আলমগীর
মানুষের মুখে ধর্মের নামে অনেক কথা আমরা শুনি যেগুলো মূলত ধর্মীয় কথা নয়। লোকমুখে প্রচলিত প্রবাদপ্রবচন মাত্র! তবু আমরা না জেনেই সেটাকে রাসূল সা:এর দিকে সম্বন্ধ করে বলি! অনেক মানুষকে দেখেছি নিজের একটা কথাকে নির্দ্বিধায় রাসূল সা: এর নামে বলে বেড়ায়! বলে এটা বোখারী শরীফের কথা!! নাউযুবিল্লাহ! কি ভয়ঙ্কর ঔদ্ধতা! অথচ রাসূল সা:বলেছেন,যে ব্যক্তি আমার নামে মিথ্যা বলবে তাঁর আবাস্থল জাহান্নাম! (বুখারী) অন্যত্র তিনি বলেছেন, তোমরা আমার থেকে হাদীস বর্ণনা পরিহার করবে, শুধু যা জান তা ছাড়া (তিরমিযি)। এ প্রসঙ্গে আন-নাবাবী (৬৭৬হি) বলেন,রাসূল সা:এর নামে মিথ্যা বলা কঠিন হারাম! ভয়ঙ্কর কবিরা গুনাহ এবং জঘন্যতম ও ধ্বংসাত্মক অপরাধ! উল্লিখিত আলোচনা থেকে আমরা খুব সহজেই অনুমান করতে পারি নিজেদের অসচেতনতায় আমরা মাঝে মাঝে কত বড় গুনাহে লিপ্ত হয়ে যাই। তাই হাদীস হিসেবে কিছু বলার পূর্বে নিশ্চিত জেনেই তা বলতে হবে!
চলুন,আপনাদেরকে সমাজে প্রচলিত কিছু কথা সম্পর্কে সচেতন করি, যেগুলো মূলত হাদীস নয়! আমাদের সকলের জানা এই কথাটা ‘আসসালাতু মিরাজুল মুমিনীন’ অর্থাৎ নামাজ মুমিনে মিরাজ।এটা হাদীস নয় প্রসিদ্ধ একটা উক্তি মাত্র! তবে এ কথাটার মর্ম সহীহ হাদিস থেকে আহরণ করা যায়! বহুল উচ্চারিত ‘দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত ইলম অন্বেষণ কর’ এ প্রবাদ ও হিতোপদেশটাও আমাদের নিকট হাদীস হিসেবেই প্রসিদ্ধ। কিন্তু এটা হাদীস নয়! জ্ঞান অর্জনের প্রতি ইসলামে অজ¯্র উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে! আমরা সেগুলো বিজ্ঞজনদের নিকট থেকে জানব।
এবার একটা ঘটনা শুনাই! হযরত ঈসা আঃ-কে বাল্যকালে তাঁর মা মারইয়াম আঃ যখন মকতবে পাঠান তখন মকতবের শিক্ষক তাঁকে বললেন,বল,আলিফ,বা..। ঈসা আঃ প্রশ্ন করলেন আলিফ অর্থ কী? শিক্ষক উত্তর দিতে পারলেন না। তখন ঈসা আঃ নিজেই শিক্ষকের চেয়ারে বসে আলিফ থেকে শুরু করে ইয়া পর্যন্ত প্রতিটি বর্ণের ব্যাখ্যা করলেন এবং প্রতিটি বর্ণ থেকে আল্লাহর বিভিন্ন মহিমার বর্ণনা দিলেন। এই ঘটনাটা আমরা প্রায়ই ওয়াজ মাহফিলে শুনে থাকি। কিন্তু এটা একটা ভিত্তিহীন গল্প মাত্র। যা ধর্মের নামে বলা একদম অনুচিত। আরেকটা ঘটনার উদ্ধৃতি দিই। হযরত ফাতেমা রাযিঃ -কে কবরে দাফন করার সময় সাহাবায়ে কেরাম কবরকে সম্বোধন করে বলেছিলেন,”হে কবর, সাবধান থেকো! তুমি কি জানো,তোমার উদরে কাকে রাখা হচ্ছে? ইনি হলেন সাইয়িদুল আলামীনের প্রিয়তম কন্যা। এ কথা বলার সাথে সাথে কবর থেকে আওয়াজ আসল,আমার কাছে বংশ-বিচার নেই,এখানে প্রত্যেকের আমল অনুসারে আচরণ করা হবে।
এটাও একটা ভিত্তিহীন মুখরোচক চটকদার গালগল্প! তাই ধর্মের সাথে সংশ্লিষ্ট করে এটা বর্ণনা করা জঘন্যতম অপরাধ। আসুন আমরা এসব বিষয়ে সতর্ক হই! সচেতন হই! ধর্মের নামে যেকোন কিছু না বলে আগে বিজ্ঞজনদের শরণাপন্ন হই।
লেখক: কবি ও কলামিস্ট । ইবি, কুষ্টিয়া