জাকারিয়া হারুন
ঘুষ হারাম। কম হোক বেশি হোক। সহনীয় মাত্রায় হোক। আর অসহনীয় মাত্রাই হোক। এটি সামাজিক ব্যাধিও। ঘুষ হচ্ছে স্বাভাবিক ও বৈধ উপায়ে যা কিছু পাওয়া যায় তার উপর অবৈধ পন্থায় অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করা। কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়মিত বেতন-ভাতা পান, এর বাড়তি কিছু অবৈধ পন্থায় গ্রহণ করে তা ঘুষ হিসাবে বিবেচিত হবে।
রক্ষকই হয় ভক্ষক। যারা আমাদের সমাজকে এগিয়ে নিবে নতুন মাত্রায় তারাই যখন কলুষিত ঘুষের ঘেরাটোপে। তাহলে দেশের উন্নতি অগ্রগতি কীভাবে সম্ভব? আজ ঘুষকে উপহার ভাবা হচ্ছে। ফাইলে ঘুষ না পেলে কাগজে সই হয় না। ঘুষের মাধ্যমে চাকুরির কারণে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে মেধাহীনদের প্রাদুর্ভাব ঘটে। যে বা যারা ঘুষ দিয়ে চাকরি নেয় তারা কখনো সেবা মনে করে কাজ করবে না। বরং সব সময়ই ধান্ধায় থাকবে কীভাবে টাকা উপার্জন করা যায়?
আমাদের সমাজে নানা ছলনায় চলে ঘুষ। অনেক সময় টাকা-পয়সা ছাড়াও উপঢৌকনের নামে নানা সমগ্রী প্রদান করা হয়। সুতরাং যেভাবেই হোক, আর যে নামেই হোক তা ঘুষের অন্তর্ভুক্ত। হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘ঘুষ প্রদানকারী ও ঘুষ গ্রহণকারী উভয়ের উপরই মহান আল্লাহর অভিশাপ’।
ছলনা করেও ঘুষ হারাম তার একটি ঘটনা তুলে ধরছি, “মানবতার নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) একজন সাহাবীকে কর্মচারী নিয়োগ করে জাকাত আদায়ের জন্য পাঠালেন। সে ফিরে এসে রাসূল (সা.)কে বললেন, এটা জাকাতের সম্পদ আর এটা আমাকে উপহারস্বরূপ দেওয়া হয়েছে। তার এ কথায় রাসুল (সা.) এর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। তিনি মসজিদের মিম্বারে দাঁড়িয়ে বললেন, সরকারী কর্মচারীর কি হলো! আমরা যখন তাকে কোনো দায়িত্ব দিয়ে কোথাও প্রেরণ করি তখন সে ফিরে এসে বলে এই সম্পদ আপনাদের (সরকারের) এবং এটা আমাকে প্রদত্ত উপহার। সে তার বাড়িতে বসে থেকে দেখুক তাকে উপহার দেওয়া হয় কি না ?
ঘুষ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, “তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করো না এবং মানুষের ধন-সম্পত্তির কিছু অংশ জেনেশুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তা বিচারকদের বা প্রশাসকদের কাছে পেশ করো না। (সূরা বাকারা : ১৮৮)
আমাদের সমাজে সুষ্ঠ বিচার পাওয়া দিন দিন দুরুহ হয়ে যাচ্ছে। বিচারকের জন্য ধার্য করতে হয় মোটা অংকের টাকা। মহান আল্লাহ বলেছেন,“ তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না এবং জনগণের সম্পদের কিয়দাংশ জেনে শুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে বিচারকগণের কাছে পেশ করো না”। (সুরা বাকারা আয়াত ঃ ১৮৮)
মৃত্যু অবশ্যম্ভাবি। সবার জীবনেই আসবে মৃত্যু। পার্থিব এ জীবন মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পরিক্ষা ক্ষেত্র। সবকিছু অবলোকন করছেন মহান প্রভু। বিচারের মাঠে চূড়ান্ত ফলাফল দেবেন। রঙ্গিন এ পৃথিবীর সাময়িক একটু সুখের আশায় ঘুঘ খাওয়া উভয় জগতেই কষ্টের কারণ হবে। সুতরাং ঘুষকে না বলে সততা পথে চলুন। শান্তি পাবেন সামাজিক ও আত্মিক। হযরত মুহাম্মদ (সা.) দেখানো পথে চলার মাঝেই উভয় জগতের সফলতা। মহান আল্লাহ আমাদের সঠিক পথে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।