কাহিনী সংক্ষেপ : মো. মোজাম্মেল, বয়স ৪৪। চাসহ পানীয়, বিস্কুট বিক্রি করে সংসার চালাতো। কিন্তু ইদানীং সে দোকানে যেতে চায় না, বউ জোর করে পাঠায়। কিন্তু সে দোকানে গিয়ে বসে থাকে, কিছু বিক্রি করে না। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে তাদের এখন পথে নামতে হবে ভিক্ষা করতে। কেননা একমাত্র উপার্জনের উৎস ছিল ঐ দোকানের আয়। অতীত ইতিহাস বলে তিনি বিগত ১৫ বছর ধরে স্ত্রীকে সন্দেহ করে আসছেন, অন্য পুরুষের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে কিনা এ নিয়ে।
বার বার দোকান থেকে ঘরে ফিরে আসতেন, কেননা তার মনে হতো কেউ বাড়িতে ঢুকে কিছু নিয়ে গেলো কিনা? ২০১৬ সালে তার হার্টের বাই পাস অপারেশন হয়। এরপর বাসায় ফিরে তার সন্দেহ হয় ঐ অপারেশনের ডাক্তার তার কিডনি খুলে রেখে দিয়েছে। বউকে বলে আমাকে পরীক্ষা করে দেখাও সত্যি কিডনি নিয়ে গেছে কিনা। তারা ডাক্তার দেখায়, আল্ট্রাসোনোগ্রাম করায়। ডাক্তার দেখায় যে কিডনি আছে। এরপর শুরু হলো চায়ের পাতিলের ঢাকনা খোলা কিনা তা নিয়ে সন্দেহ। তার ধারণা, পাতিল খোলা মাত্রা পোকামাকড়, জীবাণু এতে পড়ে যায় এবং সে চা খেলে মানুষের ক্ষতি হবে। এ জন্য কিছুক্ষণ পর পর ঢাকনি আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতো। এভাবে রোগ বাড়তে লাগলো। এখন মনে হয় দোকানের মালপত্র সব মেয়াদ উত্তীর্ণ, ডেট চলে গেছে এসব কেউ খেলে তার ক্ষতি হবে। তাই সে ঐ সব পণ্য বিক্রি করতো না।
সে দোকানে যেতে চাইতো না, কান্নাকাটি করতো। বউ জোর করে পাঠাতো, দোকানে না গেলে সংসার চলবে কেমনে? বাধ্য হয়ে দোকানে গিয়ে বসে থাকতো। কেউ চা চাইলে না করতো যে চা নেই। তার ধারণা হয়তো বিষ বা ক্ষতিকর কিছু রয়েছে তা খেয়ে লোক মারা যাবে ও পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যাবে। কাস্টমার এসে পানি, ফলের জুস, বিস্কুট চাইলে বলতো নাই। কারণ তার সন্দেহ এগুলোর ডেইট শেষ হয়ে গেছে। মেয়াদ উত্তীর্ণ এগুলো খেয়ে মানুষ মারা যাবে। বিশেষ করে বড় অফিসারদের কাছে কোন ভাবেই কিছু বিক্রি করতো না, কেননা এরা ক্ষমতাশালী। ডেট নেই জিনিষ বিক্রির জন্য তাকে পুলিশে ধরিয়ে দেবে। সে বলে স্যার বুঝি চিন্তাগুলো ঠিক না, কিন্তু মন মানে না, সব বুঝি তবে মনকে মানাতে পারছি না।
এই রোগের জন্য বহু চিকিৎসা নেওয়া হয়েছে কিন্তু কোন উপকার হয়নি। যারা কিছু পড়াশোনা করেছেন ও যারা সাইকিয়াট্রিস্ট তারা চট করে ডায়গনসিস করে বলবেন ও এতো ওসিডি (অবসেসিভ কমপালসিভ ডিসঅর্ডার)। কিন্তু অনেক মনোচিকিৎসক তাকে পূর্ণ ডোজ ও দীর্ঘমেয়াদে ওসিডির ঔষধ ও রেসপন্স প্রিভেনশন থেরাপি দিয়ে চিকিৎসা করলে ও কোন ফল পাওয়া যায়নি। আবার এন্টি সাইকোটিক দিয়ে ও ফল পাওয়া যায়নি।
গত রোগ কাহিনী কুইজ হিসেবে দিয়েছিলাম সাধারণ পাঠকদের জন্য। আজকেরটি সাইকিয়াট্রিস্টদের জন্য ও কুইজ। ১। এটি ওসিডি ২। এটি ডেলুসনাল ডিসঅর্ডার-প্যারানয়েড টাইপ ৩। এটি সিজোফ্রেনিয়া, স্বপক্ষে যুক্তিসহ মন্তব্য চাচ্ছি। মানসিক রোগে মানুষ মারা না গেলেও তার কষ্ট কতো, তার জীবন ও সংসার কিভাবে পঙ্গু হয়ে যায় এ কাহিনী তার সাক্ষ্য। মানসিক রোগকে অবহেলা করবেন না।
লেখক : চিকিৎসক
সম্পাদনা : খন্দকার আলমগীর হোসাইন