ধীরেন্দ্র নাথ বরুরী
দেবকুলে শিব ‘মহাদেব’ বা ‘দেবাদিদেব’ নামে পরিচিত। অন্যদিকে বিষ্ণু ও তার অবতারদের ‘পুরুষোত্তম’ হলে অভিহিত করা হয়। সে হিসাবে দেখলে, রামচন্দ্র ও কৃষ্ণও পুরুষোত্তম। কিন্তু শিব বা তাঁর অবতারদের সম্পর্কে এই শব্দ চলিত নয়। এখানে প্রশ্ন জাগতেই পারেÑ শিবকে কি বিষ্ণুর চাইতে নূন্য বলে মনে করা হয়? দক্ষিণ ভারতে গোটা মধ্যযুগ জুড়ে বৈষ্ণব আলবার ও শৈব নায়নার সম্প্রদায় এই নিয়েই তর্ক করছে, কখনও কখনও সেই তর্ক হিংসাত্মক ঘটনাতেও পর্যবসিত হয়েছে। দেখা যেতে পারে এই রহস্যকে।
‘পুরুষোত্তম’ শব্দটির সন্ধি-বিচ্ছেদ করলে যে দু’টি শব্দ পাওয়া যায়, সেগুলিÑ ‘পুরুষ’ এবং ‘উত্তম’। অর্থাৎ যিনি পুরুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। এর বাইরে এই শব্দটির আর একটি অর্থও রয়েছে। সেটা এইÑ যে ব্যক্তি যাবতীয় দোষের উর্ধ্বে, যিনি চিরন্তন এবং যাবতীয় জীবের মধ্যে সর্বাগ্রগণ্য। বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে এই অভিধা প্রযুক্ত হয় এই কারণেই যে, তাঁকে যাবতীয় সৃষ্টির আধার বলে কল্পনা করা হয়। মনে রাখতে হবে, সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার উৎপত্তিও অনন্তশায়ী বিষ্ণুর নাভি থেকে। সেদিক থেকেই বিষ্ণু ‘পুরুষোত্তম’Ñ তাঁর লয় নেই, ক্ষয় নেই, বিনাশ নেই। তিনি পরব্রহ্মের মূর্ত রূপ।
অন্যদিকে, শিবকে সনাতন ধর্ম ‘তৎপুরুষ’ বলে চিহ্নিত করে। যার অর্থÑপুরুষের মধ্যে যিনি প্রথম। সেদিক থেকে দেখলে, শিবও পরমব্রহ্মস্বরূপ।
‘শিব পুরাণ’ বা ‘বিষ্ণু পুরাণ’-এ বিবিধ রূপকের আড়ালে শিব ও বিষ্ণুকে যে মহিমায় আঁকা হয়েছে, তাতে এমন বোধ হতেই পারে যে, শিব ও বিষ্ণু উভয়ে একই সত্তার দুই ভিন্ন প্রকাশ। প্রলয়পয়োধিজলে অনন্তশায়ী বিষ্ণু এবং অনাদি অনন্ত শিব আসলে একই শক্তির প্রকাশ। কেবল দুই ভিন্ন নামে তাঁদের ডাকা হয়েছে।