পার্থ প্রতিম মজুমদার
‘হরি বলতে যিনি হরণ করেন। আমাদের জন্ম-মৃত্যু-জরা-ব্যাধিময় মহাদুঃখ যিনি চিরতরে হরণ করে সচ্চিদানন্দময় পরম গতি দান করেন, তিনিই হরি।
‘হরি বল্’ বা হরিবোল কথাটিতে সবাইকে ‘হরি’ বলতে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। কলিযুগে পাবনাবতারী শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভু নির্দেশ দিয়েছেন কীর্তনীয়ঃ সদা হরিঃ সর্বদাই হরিনাম কীর্তন করতে হবে। কারণ হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তনই কলিযুগের বদ্ধ জীবের একমাত্র ধর্ম, একমাত্র উদ্ধারের পথ। হরিনামই শান্তির পথ। এই মনুষ্য-জীবন হরিভজনের জন্যই নির্ধারিত। শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হয়েছে:”এই মনুষ্যদেহটি সকল ফলের মূল; অতএব, আদ্য, সুলভ ও সুদুর্লভ। এটিই পটুতর নৌকা। শ্রীগুরুই এর কর্ণধার। কৃষ্ণকৃপারূপ অনুকূল বায়ুর দ্বারা পরিচালিত এরূপ নৌকা লাভ করেও যিনি এই সংসার সমুদ্র পার হতে চেষ্টা না করেন, তিনি আত্মঘাতী।
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত জড়জাগতিক বিষয়ে মোহাচ্ছন্ন মানুষ হরিনাম কীর্তনের ব্যাপারে আগ্রহী নয়। সে সারা জীবন হাবিজাবি পরিকল্পনায় কাটিয়ে বার্ধক্যে হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় এই সংসারকে সম্পূর্ণ অসার মনে করে ভগবানের কথা হয়তো স্মরণ করতে পারে। মরণকালে সুকৃতিমান ব্যক্তি হরিনাম স্মরণ করে থাকেন।
যখন লোক শব দাহ করতে শ্মশানে যায়, তারা ‘হরি বল্’ রব করে, কারণ তখন স্মরণীয় এই যে, আমাদের সকলের এই প্রিয় জড় শরীরটি যে কোনো মুহূর্তে ছেড়ে দিতে হবে। যদি জীবন সার্থক করতে হয় তবে ‘হরি বল্’, হরিনাম কীর্তন করা উচিত। এই জন্ম-মৃত্যুর দুঃখময় ভবচক্র থেকে চিরতরে উত্তীর্ণ হতে হলে হরিনাম কীর্তনে সদা যুক্ত থাকা উচিত। শাস্ত্রে বলা হয়েছে:
যজন্তি হি সুমেধসঃ।
সুমেধাগণই ভজন করেন।