হীরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস
হিন্দু আমাদের আসল নাম নয়। এ নাম অন্যদের দেয়া। যেহেতু বৈদিক সভ্যতার উত্থান হয় সিন্ধু নদের তীরে, আর সিন্ধুকে তখনকার অশিক্ষিত যাযাবর গোষ্ঠী হিন্দ নামে ডাকত, সেখান থেকেই হিন্দু নামটি এসেছে।
আবার অনেকে হিন্দু ধর্মকে সনাতন ধর্ম বলেন। কারণ এ ধর্ম হল চিরন্তন, শাশ্বত, অব্যয়। এজন্য একে ডাকা হয় সনাতন অর্থাৎ আদি ধর্ম বলে।
প্রকৃত পক্ষে এটি হল মানব ধর্ম। মানুষের স্বাভাবিক যা ধর্ম তাই হল সনাতন ধর্ম। আগুনের যেমন ধর্ম উত্তাপ বা দগ্ধ করার শক্তি তেমনি মানুষের জন্মগত বা স্বভাবগত বা স্বাভাবিক ধর্ম হল সনাতন। তাই ধর্মকে রিলিজিয়ন (ৎবষরমরড়হ) বলা ঠিক না। সংস্কৃত ভাষায় ধর্ম মানে হল মানুষ বা কোনো বস্তু যা ধারণ করে। যেমন অগ্নি ধারণ করে উত্তাপ তাই অগ্নির ধর্ম হল উত্তাপ যা কোনো কিছুকে দহন করে বা পুড়িয়ে দেয়। এখন কেউ যদি বলে অগ্নির রিলিজিয়ন উত্তাপ। তা হলে ব্যাপারটা হাস্যকর হয়ে যায় না? আর মানুষে যা ধারণ করে তাই হল মানুষের ধর্ম বা মানব ধর্ম বা সনাতন ধর্ম। তেমনি যদি কেউ জিজ্ঞেস করে আপনার রিলিজিওন কি? আর আপনি যদি উত্তর দেন সনাতন বা হিন্দু তাহলে ব্যাপারটা হাস্যকর হয়ে যায়। তাই ধর্মের সমার্থক কখনও রিলিজিওন হতে পারে না। যদি সমার্থক ইংরেজি শব্দ খুঁজতেই হয় তা হতে পারে ঢ়ৎড়ঢ়বৎঃু। তাহলে ধর্ম কি? যা মানুষের মনুষ্যত্ব কে জাগিয়ে তোলে তাই ধর্ম। মানুষের যা স্বভাব, যাই মানবতা তাই আসলে ধর্ম।
স্বামীজির ভাষায়, ধর্ম হল মানুষের পশুত্বকে দমন করে আর দেবত্ব জাগিয়ে তোলে। আর মানব ধর্ম বা সনাতন ধর্ম বা মানবতার এই অনন্য দর্শন বৈদিক ঋষিরা দেখেছিলেন, যারা সিন্ধু নদীর তীরে সভ্যতার পত্তন করেছিলেন। অনার্যরা সিন্ধুকে হিন্দ বা হিন্দু উচ্চারণ করত তাই এ মানব ধর্মই হল হিন্দু ধর্ম কিংবা বৈদিক ধর্ম। অর্থাৎ সনাতন বা মানব ধর্মের আজ যে নাম হয়ে গেল হিন্দু ধর্ম তা আসলে দেয় বিদেশিরা। তাই এ নামটি প্রকৃত না। তবে নামে কিছু আসে যায় না। তাই মানুষের যে কোনো মানুষের জন্মগত বা স্বভাবগত ধর্মকে আপনি ডাকতে পারেন বৈদিক ধর্ম বা সনাতন ধর্ম বা মানব ধর্ম অথবা শুধুমাত্র ধর্ম। কারণ মানবের তো একটিই ধর্ম।
তাহলে ৎবষরমরড়হ কি? আসলে রিলিজিয়ন হল এক একটি মত বা মার্গ। বিভিন্ন মহাপুরুষ বিভিন্ন মত দিয়েছেন ঈশ্বরকে পাবার পথ হিসেবে। যেমন বুদ্ধ, শ্রীচৈতন্য, শঙ্করাচার্য, যিশু বিভিন্নজন। অর্থাৎ বৈষ্ণব, শাক্ত, বৌদ্ধ, শৈব, গানপত্য, শিখ, জৈন, দ্বৈত, অদ্বৈত ইত্যাদি হল রিলিজিয়ন। এ গুলো হল মত বা রিলিজিয়ান যা সবই হল মানব ধর্মের শাখা প্রশাখা। এখন এসব মার্গের বা পথের ভাল মন্দ থাকতে পারে, সুবিধা বা অসুবিধা থাকতে পারে, গ্রহণযোগ্যতা বা অগ্রহণযোগ্যতা থাকতে পারে।
ধর্ম হল একটি। তাকে কেউ ডাকে মানব ধর্ম, কেউ মানবতা, কেউ বৈদিক, কেউ সনাতন, কেউ আদিধর্ম আর মত পথ বা মার্গ হল অসংখ্য। লেখক : সভাপতি, জাতীয় হিন্দু সমাজ সংস্কারক সমিতি