সম্রাজ্ঞী কে : শেখ হাসিনা নাকি খালেদা জিয়া?
দীপক চৌধুরী
দায়িত্বশীল পদে থেকে দায়িত্বহীন আচরণকারীদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। রাজনীতিতে যেনো দেখা যায় এটা সবচেয়ে বেশি। কিন্তু তারা ভুলে যাচ্ছেন, সংবিধান আর উল্টোপথে চলবে না। এটি বহুকাল, বহুবছর উল্টোপথে হেঁটেছে। সংবিধান জনগণের কল্যাণের পথে চলবে।
সম্প্রতি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সভায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন আর প্রধানমন্ত্রী নন, তিনি স¤্রাজ্ঞী হয়ে গেছেন’ বলে মন্তব্য করেছেন। রিজভী আরো বলেছেন, ‘প্রধান বিচারপতির পরিণতির পরেই আজকে সব পার্লামেন্ট ক্ষমতাশালী বাদশাহীতে পরিণত হয়েছে। রানীতে পরিণত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’ তার এমন উক্তির কারণেই স্মরণ করিয়ে দেওয়া দরকার আসলে এদেশে স¤্রাজ্ঞী কে?
এটা সর্বজন স্বীকৃত যে, একটি গরীব দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে খালেদা জিয়া ৬ নম্বর মইনুল রোডের বাড়িতে কী ধরনের জীবন-যাপন করতেন তা আর গোপন নেই। বাংলাদেশের রাজনীতিকে কলুষিত, কলঙ্কিত ও জঘন্য করার ইতিহাস বিএনপির আছে। আর দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রমাণ করেছেন, ক্ষমতা হাতে পেলে কীভাবে এর অপব্যবহার করতে হয়। সুতরাং রিজভী সাহেবদের উচিৎ জেনেশুনে অপপ্রচার না করা। স¤্রাজ্ঞী বা রানির উপমাতো প্রযোজ্য খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধানম-ির ৩২ নম্বর বাড়িটি যাদুঘর করে জনগণের সম্পদ করে দিয়েছেন। অন্যদিকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ৬ নম্বর মইনুল রোডের ১৬৮ কাঠা চৌহোদ্দির বাড়িটি খালেদা জিয়া কীভাবে কয়েকযুগ নিজের দখলে রেখেছিলেন এর ইতিহাসতো এদেশের মানুষের অজানা নয়! এটি ছিল সেনাবাহিনীর একজন উপপ্রধানের বাড়ি। স্বামী জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বাড়িটি মাত্র এক টাকায় ‘লিজ’ দেওয়া হয়েছিলো খালেদা জিয়াকে। মনে আছেÑ কামাল লোহানী বাংলাদেশ টেলিভিশনে সেসময় সম্ভবত (১৯৮১ সালের দিকে) ‘যদি কিছু মনে না করেন’ অনুষ্ঠানে একদিন খালেদা জিয়ার জীবনাচার তুলে ধরেছিলেন। দুই পুত্র তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানকে দেখিয়ে তখন খালেদা বলেছিলেন, জিয়াউর রহমান নাকি অতি সাদামাটা জীবনযাপন পছন্দ করতেন। তাই ছেলেদের এভাবেই গড়ে তুলেছেন। অথচ কয়েকবছর আগে উচ্চআদালতের রায়ে খালেদা জিয়া যখন বাড়িটি ছেড়ে যান সেদিন সাংবাদিক হিসাবে যা দেখেছি তা নিজের চোখকেও বিশ^াস করতে পারিনি।
সাদামাটা জীবনের নমুনা কী তাই? দেশবাসীও বাড়িটি দেখেছেন টেলিভিশনের কল্যাণে। যদি ভুল না করে থাকে; দেখা গেলÑ খালেদা জিয়ার (দাস-দাসী) গৃহপরিচারক ও গৃহপরিচারিকার সংখ্যা ছিল ৬৭, বাড়িতে ২২টি ঘর ও কামরা ছিলো। টেলিভিশন ১৭টি, ফ্রিজ বা রেফ্রিজারেটর ১৭টি, সোফাসেট ১০৪টি, শীততাপ নিয়ন্ত্রিত মেশিন বা এসি ৬১টি। সেই বাড়িতে খালেদা জিয়ার একটি শয়নকক্ষ ছিল ৬ইঞ্চি কার্পেট মোড়ানো। যে দেশে রাজধানীতেই প্রায় তখন প্রায় ষাট লাখ মানুষ আশ্রয়হীন ছিলÑ সেই গরিব রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জীবন-যাপন ছিল স¤্রাজ্ঞীর মতো। এ বাড়ি থেকেই কুখ্যাত রাজাকার শাহ আজিজের পরামর্শে জিয়া ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধী ঘাতকদের রাজনীতিতে এনেছিলেন।
ঘৃন্যও সন্ত্রাসী দল হিসাবে আদালতের স্বীকৃত জামায়াতকে রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনা হয়। বঙ্গবন্ধুর সপরিবারের খুনিরা পদোন্নতি পেয়েছে, রাষ্ট্রদূত হয়েছে এমনকি সংসদ সদস্যও হয়েছে এ বাড়িতে বসেই। রাজনীতিকে কলঙ্কিত ও নষ্ট করার কৌশল আবিষ্কারকরা এভাবেই মিথ্যাচার করে যাবেন, কোনো জবাবদিহি থাকবে না, প্রতিবাদের বিধান থাকবে না তা হতে পারে না। আমাদের সংবিধান সকল বিধিবিধানই রয়েছে।
সুতরাং এর দৃষ্টান্তমূলক জবাব ও শাস্তিবিধানের ব্যবস্থা নেওয়া অতি জরুরি। মানুষ জানে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিধান থাকছে না। কারণ বর্তমান সরকার ২০০৯ সালের ২৪ ফেব্রয়ারিতে আরপিও সংশোধনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞা থেকে সশস্ত্রবাহিনীকে বাদ দিয়েছে। তাই বর্তমান সরকারের আমলেই সশস্ত্রবাহিনীকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) থেকে বাদ দেওয়ার ফলে সংশোধিত আরপিওতে সেনাবাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করার সম্ভাবনা নেই। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকে যেকোনো সময় ব্যবহার করা হবে। সেনাবাহিনী বিগত নয়টি নির্বাচনে যেভাবে সহযোগিতা করেছে আশা করি একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও সেভাবে সহযোগিতা করবে।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গল্পকার
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ