মে. জে. (অব.) মোহাম্মদ আলী সিকদার
২০১৮ সালে আমরা প্রবেশ করছি এমন একটি সময়, যখন বাংলাদেশের অনেক বড় অর্জনও আছে, আবার ব্যর্থতাও আছে। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার, জননিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি ছিল উগ্র জঙ্গীদের পক্ষ থেকে হামলা। তবে বাংলাদেশ সরকার ও প্রশাসন এই জঙ্গী তৎপরতাকে সফলভাবে মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশের জঙ্গী ধমনের বিষয়টি সারা বিশ্বে এখন মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাইরের দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে জানতে চায়, কিভাবে এটি সম্ভব হয়েছে? আমেরিকা আমাদের থেকে শতগুণ শক্তিশালী রাষ্ট্র। তাদের গোয়েন্দা, আইনশৃঙ্খলা, সততা, নৈতিকতা দিয়ে আমাদের মতো সফল হতে পারেনি। সুতরাং বাংলাদেশ একটি অনন্য উদহারণ সৃষ্টি করেছে। তবে বাংলাদেশে যে অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, গুম, হত্যা, ধর্ষণ ইত্যাদি ঘটনাগুলোতে ঘাটতি রয়েছে। মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে যে প্রত্যাশা, সেটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পূরণ করতে পারছে না। তবে, সার্বিক দৃষ্টি ভঙ্গিতে, কোনো কাজ কখনো সম্পূর্ণভাবে শেষ করা সম্ভব হয় না। পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্রে এমন নজির নেই। বাংলাদেশও পারেনি এমনটি সরাসরি বললে হবে না। আমাদের দেশে একসময় খুন, গুম আরও বেশি ছিল। প্রথম আলো একটি রিপোর্ট করেছিল, ২০১৫ সালের দিকে। সেখানে ছিল, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি গুম, খুন হয়েছে ২০০৫ সালে ৩৭৭ জন। তারপর হচ্ছে, ২০০৬ সালে ৩৩৬ জন এবং ২০০৯ সালে ২২৯ জন। ২০১৪ সালে এসে ৯৬ এবং ২০১৫ সালে এসে গুম, খুন হয়েছে ৪৫ জন। এখন যেটি ঘটছে, ১০ জন হোক আর ১০০ জন হোক। গুম, হত্যাটি উদ্বিগ্নের বিষয়। দেশের মানুষ এটি প্রত্যাশা করে না। তবে ২০০৫ সাল থেকে এখন নিরাপত্তার উন্নতি ঘটেছে। তারপরও আমরা প্রত্যাশা করি, সরকার ও প্রশাসন আমাদের দেশের এই গুম, খুনগুলো রোধ করবে। তার সাথে আমাদের ব্যক্তি, সমাজ, রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন সবাই সচেতন হতে হবে। কারণ হচ্ছে, এই সমস্ত ঘটনার পিছনে সমাজ ও রাজনৈতিক দলগুলোর দোষ আছে। আমাদের দেশে এখন রাজনৈতিক অসুস্থতা চলছে। রাজনীতিতে যে প্রতিযোগিতাটি চলছে, সেটি একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা। আর এই প্রতিযোগিতা থেকে আমরা বের হতে না পারলে দেশে শান্তি, শৃঙ্খলা কখনোই আসবে না। তাই আমাদেরকে অসুস্থ রাজনীতি থেকে বের হতে হবে। তাহলে গুম, খুন কমে যাবে।
পরিচিতি : নিরাপত্তা বিশ্লেষক
মতামত গ্রহণ : গাজী খায়রুল আলম
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ