![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/themes/amader-orthoneeti/img/sky.jpg)
অনীশ্বরবাদ
বুদ্ধের দর্শনের যে রূপÑঅনিত্য, অনাত্ম, প্রতীত্যসমুৎপাদÑআমরা দেখেছি, সেখানে আত্মার ন্যায় ঈশ্বর ও ব্রহ্মের কোনো স্থান নেই। সত্য যে, বুদ্ধ অনাত্মবাদ সন্বন্ধে যেমন ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ঈশ্বরবাদ সন্বন্ধে তেমন দেন নি। এই কারণে কোনো কোনো লব্বপ্রতিষ্ঠ পাশ্চাত্যদর্শনের ভারতীয় অধ্যাপক বলেন যে, বুদ্ধ নীরব থেকে এভাবে বহুলাংশে উপনিষদের সিদ্ধান্তের প্রতি পূর্ণস্বীকৃতি দান করেছেন।
ঈশ্বরের ধারণা যেÑপ্রকারে এসেছে তাতে বিশ্বের হর্তা, কর্তা, বিবধাতারূপে এক নিত্যচেতন ব্যক্তির অর্থ গ্রহণ করা চলে। বুদ্ধের প্রতীত্যসমুৎপাদে ওই রূপ ঈশ্বরের স্থান (অবসর) তখনই হতে পারে, যখন সমস্ত ‘ধর্মে’র ন্যায় তিনিও (ঈশ্বরও) প্রতীত্যসমুৎপন্ন হন। প্রতীত্যসমুৎপন্ন হলে তিনি আর ঈশ্বর থাকবেন না। উপনিষদে আমরা বি04শ্বের এক কর্তার সন্ধান পাই; ‘প্রজাপতি প্রজার ইচ্ছায় তপ করিলেন।….তিনি তপস্য করিয়া যুগল (রয়ি ও প্রাণ) সৃষ্টি করিলেন।’ প্রশ্নোপনিষদ ১/৩Ñ১৩
‘ব্রহ্ম কামনা করিলেন। তপস্য করিয়া তিনি এইসব (বিশ্ব) কে সৃষ্টি করিলেন।… ‘তৈত্তিরীয় ২/৬
‘আত্মা প্রথমত একাকী ছিলেন, তিনি ইচ্ছা করিলেনÑজগৎ সৃষ্টি করি। তিনি এই জগৎ সৃষ্টি করিলেন।’ঐতরেয় ১/১
এখন বুদ্ধ এই সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা, ঈশ্বর, সৎ…এর কোন গতি করেছেন শুনুন। মল্লগণের প্রজাতান্ত্রিক রাজধানী অনুপ্রিয়াতে বুদ্ধ ভার্গব গোত্রীয় এক পরিব্রাজকের সঙ্গে এ সম্বন্ধে আলোচনা করছিলেন। (পাথিক সুত্ত, দীর্ঘ-নিকায় ৩/১) :
সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্ম (ঈশ্বর) সম্বন্ধে বুদ্ধ এক স্থানে আরো সূক্ষ¥ পরিহাস করেছেন; ”বহু পূর্বে এক ভিক্ষুর মনে এই প্রশ্ন উদয় হইল-এই চারি মহাভূত-পৃথিবী, জল, তেজ ও বায়ু-ধাতু-কোথায় গিয়া সম্পূর্ণরূপে নিরুদ্ধ হয়? তিনি চতুর্মহারাজিক দেবগণের নিকফ গিয়া ইহা জিজ্ঞানা করিলেন। চতুর্মহারাজিক দেবগণ র্তাঁহাকে বলিলেন- আমরা জানি না; আমাদেও অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ চারি মহারাজা (ধৃতরাষ্ট্র, বিরূঢক,বিরুপাক্ষ, বৈশ্রবণ বা কুবের) আছেন, তাঁহারা সম্ভবত ইহা অবগত আছেন। ….আমাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ত্রয়স্ত্রিংশ ..যাম, …সুযাম … তুষিত (দেবগণ) … সন্তুষিত (দবপুত্র),…নির্মাণরতি (দেবগণ, সুনির্মিত (দেবপুত্র); পরনির্মিতবশবর্তী (দেবগণ),..বশবর্তী নামক দেবপুত্র, ব্রহ্মকায়িক নামক দেবগণ আছেন, তাঁহারা সম্ভবত ইহা অবগত আছেন। ব্রহ্মকায়িক দেবগণ সেই ভিক্ষুকে বলিলেন,‘আমাদের অপেক্ষা বহু বড় জ্যোতিষ্মান ব্রহ্মা আছেন…. তিনি Ñ ঈশ্বর, কতর্তা , নির্মাতা ও সমস্ত সৃষ্ট ও সম্ভাব্যণের পিতা; সম্ভাবত তিনি জানেন।’ (ভিক্ষু কর্তৃক জিজ্ঞাসিত হইয়া তাঁহারা কহিলেন…) আমরা জানি না ব্রহ্মা (ঈশ্বর) কোথায় আছেন।’
![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/themes/amader-orthoneeti/img/sky.jpg)