![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/themes/amader-orthoneeti/img/sky.jpg)
মার-বিজয়
উপল বড়–য়া : ধ্যানমার্গের সাধনার সময় মারের সঙ্গে সিদ্ধার্থের যুদ্ধের যে বর্ণা পাওয়া যায় তা রূপকার্থেও সত্য বলে মনে করে নিলে বুদ্ধের জীবনী পাঠে অনেক সত্য উপলব্ধি সম্ভব। মানবজাতির কল্যাণে কোনো মহাপুরুষ অগ্রসর হলে তাঁকে অনেক লোভে-ললসা-প্রলোভন জয় করতে হয়। তার মধ্যে প্রধান অন্তরায় কামভোগের বাসনা। বাসনাকে জয় করে পরবর্তী ধাপে পা দিতেই অসন্তোষ বা অরতি উৎপন্ন হয়, তারপর ক্ষুধা ও তৃষ্ণা একের পর এক আসতে থাকে। এসব বাসনা ও রিপুকে জয় করতে না পারলে জগতের কল্যাণ সম্ভবপর নয়। সিদ্ধার্থের ধ্যানমার্গে বসে মারকে জয় করার অর্থও তাই রূপক অর্থে বুঝতে হবে। আবার রূপক অর্থে না ধরে অন্য অর্থে ধরা যায়, কেননা একমাত্র ধ্যানী পুরুষরাই জানেন তাঁদের সাধনমার্গে কত বাধা, মনের কোণের কত কালিমা একে একে তখন উদয় হয়, কত প্রলোভনকে জয় করতে হয়, রহস্যময় মনের সঙ্গে কত যুদ্ধ কত দ্বন্দ্ব আর কত জয়-পরাজয়। এই মার-বিজয়কে মনোবৃত্তি জয়ের পরীক্ষা বলা যায়।
সেদিন বছরের শ্রেষ্ঠ দিন, বৈশাখী পূর্ণিমা। তখন গ্রীম্মের সন্ধ্যা হয়-হয়। সিদ্ধার্থ নৈরঞ্জনা নদীতে স্নান করে অশ্বত্থ বৃক্ষের নিচে বসে মন একাগ্র করলেন। পূর্ণিমার আলোয় চারদিক উদ্ভাসিতহ হতে আর দেরি নেই। ধ্যানের আসনে বসে সিদ্ধার্থ প্রতিজ্ঞা করলেন, এ শরীর থাক আর যাক, দুঃখের শেষ দেখবই দেখবÑসিদ্ধ না হয়ে, বুদ্ধ না হয়ে এ আসন ছেড়ে উঠব না। এই বলে সিদ্ধার্থ অটল হয়ে ধ্যানে বসলেন। অশ্বঘোষের বুদ্ধচরিত কাব্যের বর্ণনায় আছে, মারের তিনকন্যা বুদ্ধকে কাম, লোভ ও নানাপ্রকার তৃষ্ণা দিয়ে পরাজিত করার চেষ্টা করে। কিন্তু, বুদ্ধের অবিচল ধ্যানের কাছে তারা পরাস্ত হয়। মারও যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কৃতকার্য হতে পারেনি। বোধিসত্ত্ব কন্দর্পকে পরাজিত করে মহাপ্যত্যাহারব্যুহ নামক সমাধিতে মগ্ন হন।
![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/themes/amader-orthoneeti/img/sky.jpg)