বৌদ্ধ ধর্মে পৌষ-পূর্ণিমার তাৎপর্য
উপল বড়–য়া : প্রতিটি দিন যেমন বৌদ্ধদের জন্য একেকটি নতুন ও পবিত্র দিন তেমনি প্রতিটি পূর্ণিমা বহন করে বৌদ্ধদের একেকটি স্মৃতি বুদ্ধ তাঁর বুদ্ধত্ব লাভের ভেতর দিয়ে এসব তিথিকে করেছেন মহিমান্বিত বুদ্ধের জন্ম মাস, গৃহত্যাগ, বুদ্ধত্ব লাভ, ধর্মপ্রচার কিংবা মহাপরিনির্বাণ লাভ হয়েছে একেকটি পূর্ণিমা তিথিতে ফলে প্রতিটি পূর্ণিমা মূলত বুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত একেকটি পূর্ণিমা যেন একেকটি মহিমান্বিত দিন একেকটি বুদ্ধস্মৃতি এসব পূর্ণিমার ভেতর দিয়ে গৌতম বুদ্ধকে স্মরণ করা হয় তাঁর প্রচারিত ধর্মকে শ্রবণ করা হয় গৃহীরা বুদ্ধ পুজা, অষ্টশীল-পঞ্চশীল, দান, ধ্যানের ভেতর দিয়ে বুদ্ধের শিক্ষাকে আরও অন্তঃস্থ করে নেন হিংসা ভরা পৃথিবীতে বুদ্ধের বাণী প্রতিষ্ঠায় পারে পৃথিবীকে বাঁচার উপগোগী করতে বৌদ্ধদের একটাই উদ্দেশ্য জাগতিক জীবনকে সুন্দররূপে উপস্থাপন এবং নির্বাণ লাভ নির্বাণ লাভের জন্য দরকার পারমী ও উপপারমী পূরণ এর জন্য দরকার হয় লোভ হিংসা দ্বেষ ঘৃণা ত্যাগ করে নিজের ভেতর নিজে আবিষ্ট হয়ে ধ্যানসাধনা বুদ্ধ বলেছেন, ‘আমাদের শরীরে রয়েছে বত্রিশ প্রকার অশুচি আমাদের চোখে মুখে নাকে গাল পুঁজে ভর্তি আমাদেরকে বন্দী করে রাখে ষড়রিপু ফলে আমরা বুঝি না কোনাটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা’ গৌতম বুদ্ধ এর জন্য গৃহীদের জন্য, সন্ন্যাসীদের জন্য দিয়ে গেছেন কয়েকটি মৌখিক সংবিধান যা আজকে আমরা জানি, পঞ্চশীল ও অষ্টশীল নামে শীল অর্থ চরিত্র সেই সাথে মানবজীবন থেকে মুক্তি পেতে নির্বাণের অমৃত স্বাধ গ্রহণের জন্য রয়েছে শীল পালন, দান ও ধ্যানে নিবিষ্ট থাকা আষাঢ়ী পূর্ণিমা, অগ্রহায়ণ পূর্ণিমা যেমন বৌদ্ধদের কাছে স্মরণীয় তেমনি পৌষ মাসের পূর্নিমাও বৌদ্ধদের কাছে মহত্ত্বম একটা দিন এই বলে দেশনা শুরু করেন বৌদ্ধগুরু- “আজ পৌষ পূর্ণিমা বৌদ্ধদের কাছে এই তিথি অত্যন্ত পবিত্র আপনারা নিশ্চয় উপোসথশীলে অধিষ্ঠান করেছেন তথাগত ভগবান গৌতম বুদ্ধ প্রথম লংকা গমণ করছিলেন এই পৌষ পূর্ণিমায় বুদ্ধত্ব লাভের নয় মাস পরে বুদ্ধ লংকাদ্বীপে গমণ করেছিলেন সদ্ধর্ম প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তথাগত মোট তিনবার সিংহলদ্বীপে গমণ করছিলেন প্রথমবার উরুবেলা কশ্যপ, নদী কশ্যপ, গয়া কশ্যপ এই তিন ভাইকে স্বধর্মে দিক্ষিত করে উত্তর কুরুতে পি-াচরণ করতঃ অনোবতপ্ত হ্রদের পাশে ভোজন করতঃ বুদ্ধত্ব লাভের নবম মাসে সিংহলের মহিয়দনায় পৌষ পূর্ণিমা তিথিতে তাঁর ধর্ম প্রকাশ করার মানসে যক্ষ পরিপূর্ণ লংকা দ্বীপে গমন করেন তিনি ধ্যানবলে বুঝতে পেরেছিলেন, লংকার মধ্যস্থলে গঙ্গার মনোরম তটে তিন যোজন দীর্ঘ এবং এক যোজন বিস্তৃত যক্ষদিগের সমাগমস্থান নাগভবন উদ্যানে লংকাবাসী যক্ষগণের বৃহৎ সমাগম চলছে তথাগত সেই সমাগমে উপস্থিত হয়ে আকাশ মার্গে অবস্থান করতঃ বৃষ্টি, বায়ু, অন্ধকারাদির দ্বারা ভয়ার্ত পরিবেশ সৃষ্ঠি হলে যক্ষগণ ভয়ে বিচলিত হয়ে তথাগতের নিকট অভয় প্রার্থনা করলেন ভগবান যক্ষগণের ভয় বিদূরিত করে ধর্মদেশনা করলে কোটি কোটি প্রাণীর ধর্মচক্ষু লাভ হয়েছিল বুদ্ধত্ব লাভের ৫ম বর্ষে মহোদর এবং চুড়োদর নামক দুই নাগরাজ সিংহাসন নিয়ে দলে বলে সংগ্রামে উপস্থিত হতে দেখে তথাগত নাগদিগকে অনুকম্পা করার জন্য লংকাদ্বীপে গমন করেন ঐখানে উপস্থিত হয়ে শূন্যে অবস্থান করতঃ চতুর্দিকে তমসাচ্ছন্ন করে দিলেন এতে নাগেরা ভয়ার্ত হয়েছে দেখে ভগবান তাদেরকে ধর্মোপদেশ দিলেন এবং মিলেমিশে বাস করতে উপদেশ দিলেন বুদ্ধের আগমনে নাগেরা ভীষণ আনন্দিত হল এবং বুদ্ধের নিকট প্রার্থনা করে বললেন,- “হে সুগত আপনি অনুকম্পা না করলে, এখানে না আসলে আমরা সংগ্রাম করতে করতে ভষ্মীভূত হয়ে যেতাম” বুদ্ধত্ব লাভের ৮ম বর্ষে ভগবান ৫০০ ভিকসহ নাগরাজ মণি অক্ষিকের আমন্ত্রণে যেখানে কল্যাণী চৈত্য নির্মিত হয়েছিল, সেই স্থানে রতœদ্বারা সজ্জিত মন্ডপে সিংহাসনে সংঘের সহিত উপবেশন করলেন নাগরাজ ভগবানকে যথাসাধ্য দান, সেবা করলেন অতঃপর তথাগত সুমনকুট পর্বতে গমন করতঃ সেখানে আপনচরণ চিহ্ন অঙ্কিত করলেন এবং ঐ পর্বতের পাদদেশে যথাসুখে দিবাবিহার করে মহামুনি মহামেঘ বনারাম এসে মহাবোধিবৃক্ষের স্থানে সশিষ্য ধ্যানস্থ হলেন এভাবেই তথাগত মহাকারুণিক লংকাবাসী যক্ষ, অসুর, নাগদিগের কল্যাণের জন্য তিনবার এই সুন্দর দ্বীপে গমন করেছিলেন মহাকারুণিক বুদ্ধের আগমনে এই দ্বীপ ধর্মদ্বীপরূপে উদ্ভাসিত হয়েছিল।’