বুদ্ধের সমসাময়িক ধর্ম
কামরুল আহসান : বুদ্ধের সমসাময়িককালে জৈনধর্ম বর্তমান ছিল। জৈনধর্মের শেষ তীর্থঙ্কর মহাবীর গৌতমের জন্মের ২৪ বছর আগে জন্মগ্রহণ করেন। জৈন সাধুসঙ্ঘ তখন রাজগ্রহ অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করে। এছাড়া অনেক শ্রমন (পরিব্রাজক) শিষ্যসহ এক স্থান থেকে অন্যস্থানে ভ্রমন করে জনসাধারনকে সদুপদেশ দিতেন। সাধারণ মানুষও এইসব সাধুসন্ন্যাসীদের শ্রদ্ধা করত। এছাড়া মুনি-ঋষিরা থাকত তপোবনে। তারা বেদ অধ্যয়ন ও ছাত্রদের শিক্ষাদান করে জীবন অতিবাহিত করে দিত। পরিব্রাজক, সন্ন্যাসী, মুনি -ঋষিদের মধ্যে তৎকালিন জাতিভেদ প্রথা ছিল না। ব্রাহ্মণদের চেয়ে এদের প্রভাব জনসাধারনের মধ্যে বেশি ছিল।
এসময় ৬৩ টি শ্রমণপন্থা ছিল বলে জানা যায়। পালি সাহিত্যে ৬২টি মতবাদ ছিল বলে জানা যায়, অথ্যৎ বৌদ্ধর্ধম ছাড়া ৬২টি মতবাদ ছিল বলে মনে করা চলে। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় শ্রমণসঙ্ঘ ছিল ৬টি। আবার এই ৬টির মধ্যে জৈন নির্গ্রন্থ শ্রমন -সম্প্রদায়ের স্থান ছিল সবার উপরে। নির্গ্রন্থ শ্রমণপন্থার প্রতিষ্ঠাতা পার্শ্বনাথ মুনি। বুদ্ধের জন্মের আনুমানিক ১৯৩ বছর র্পূবে তিনি পরলোক গমন করেন। বুদ্ধত্বলাভেল আগে গৌতম নানাবিধ তপঃসাধন প্রণালী আয়ত্ত করে সত্য আবিষ্কারের প্রচেষ্টা চালান। তার মধ্যে কঠোর সাধনায় শরীরপাত করার সঙ্কল্পও করেছিলেন, কিন্তু কঠোর সাধনার অসারতা বুঝতে পেরে তিনি মধ্যম পন্থা গ্রহণ করেছিলেন। এই পথে তিনি পরিমিত আহার গ্রহণ করে অগ্রসর হন। মজ্ঝিম- নিকায়ের মহাসীহনাদ সুত্তে বুদ্ধ তাঁর শিষ্য সারিপুত্রকে বলেছিলেন, আমি চারি প্রকারের তপস্যা করিয়াছি বলিয়া মনে পড়ে। আমি তপস্বী হইয়াছিলাম, রুক্ষ হইয়াছিলাম, জুগুপ্সী হইয়াছিলাম এবং প্রবিবিক্ত হইয়াছিলাম।’
‘তপস্বিতা’ পর্যায়ের তপস্যায় দেখা যায় গৌতম উপবাসের সময় বাড়িতে সাত দিন পর এক দিন, অথবা পনেরো দিন পর এক দিন অন্ন গ্রহন করতেন। ফেলে দেওয়া চামড়ার থেকে সংগৃহীত মাংস, হাঁড়ির তলার গোড়া ভাত অথবা নতুন বাছুরের গোবর; অথবা বন থেকে আহরিত ফলমূল খেয়ে সাধনা করতেন। ‘রুক্ষতা’পর্যায়ে দেখা যায় গৌতমের শরীরে ধুলোর আস্তরণ এক পরত জমে মাটি হয়ে থাকত। ‘জুগুপ্সা’ পর্যায়ে গৌতমের চলাফেরা ছিল অত্যন্ত সাবধানী। জলের ফোঁটাটির প্রতিও মমতা অনুভব করে, ক্ষুদ্রতম প্রাণীকেও কষ্ট না দিয়ে সাবধানে থাকার নাম জুগুপ্সা প্রণালী।
তথ্যসূত্র : গৌতম বুদ্ধ, রুবী বড়–য়া/ বিপ্রদাশ বড়–য়া