আদর্শ পরিবার গঠনে স্ত্রীর দায়িত্ব ফাতেমা আক্তার সিক্ত
সমাজের মূল ভিত্তি হলো পরিবার। পরিবারের গঠন শুরু হয় বিয়ে তথা স্বামী-স্ত্রীর মধুর সম্পর্কের মাধ্যমে। সেই সম্পর্ক আরও সুন্দর ও মজবুত করে দিয়েছে ইসলাম। স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য ও স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব এবং সুখী সুন্দর পরিবার গঠনে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের ভূমিকা সুস্পষ্টভাবে নির্ণয় করে দিয়েছে। ইসলামি বিধান কোরআন-হাদিসের অনুসরণেই হতে পারে সুখী ও আদর্শ পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের গঠন। পরিবার হচ্ছে রাষ্ট্রের একক গঠনভূমি। সেই ছোট্ট রাষ্ট্রে অর্থাৎ পরিবারে স্ত্রীর ভূমিকা অপরিসীম। স্ত্রী হচ্ছেন ঘরের রক্ষণাবেক্ষণশীল ও শান্তির উৎস। স্ত্রী তার স্বামীর ঘর রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। আর তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আদর্শ স্ত্রী হিসেবে স্ত্রীর মূল কর্তব্য স্বামীর প্রতি। স্ত্রীর প্রতি তার স্বামীর অধিকার পিতামাতার চেয়েও বেশি। তাই স্বামীর কথাবার্তা ও আচরণ দ্বারা স্বামীর সন্তুষ্টি অর্জন করা উচিৎ। তাছাড়াও স্বামীর পিতামাতা ও ভাইবোনের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করেও স্বামীর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। আমাদের আশপাশে আমরা প্রায়ই এমন দেখি, বউ-শাশুড়ির মাঝে মনোমালিন্য, কথা কাটাকাটি? প্রায়ই তা ঝগড়ায় রূপ নেয়। তারপর অপেক্ষায় থাকেন দুজনেই? মা থাকেন ছেলের অপেক্ষায়? স্ত্রী থাকেন স্বামীর অপেক্ষায়। ঘুরেফিরে লোক একজনই, যিনি মায়ের ছেলে, তিনিই স্ত্রীর স্বামী। আর বাড়ির বাইরে পরিশ্রম করে গৃহকর্তা ফেরা মাত্রই শুরু করে দেন ঘ্যানঘ্যানানি। আবার শাশুড়িও একই কাজ করে থাকেন। সারাদিন বাইরে কাজ করার পর যখন স্বামী ঘরে ফেরেন, তখনই যদি এসব শুনতে হয়, তার মেজাজ বিগড়ে যাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। এক্ষেত্রে স্ত্রীর ধৈর্যশীলতা পরিবারকে অহেতুক অশান্তি থেকে বাঁচাতে পারে। শাশুড়ি, ননদ, জা কিংবা অন্য কারো সঙ্গে মনোমালিন্য হলে তা স্বামীর কর্ণগোচর করা উচিৎ নয়। আরেকটা বিষয়, স্বামীর সংসারে অভাবের অভিযোগ করা। আমার বাবার বাড়ি এই আছে, সেই আছে, তোমার সংসারে এসে জীবনটা তেজপাতা হয়ে গেলো, ইত্যাদি। কেউ আবার নিজের রূপগুণের প্রশংসা নিজেই করে। আমার জন্য অমুক বাড়ি অলার ছেলে পাগল ছিলো, তমুকের বাপ-মা তাঁদের ছেলের বউ করার জন্য আমার বাবা-মায়ের হাতে পায়ে ধরেছিলো, তাদের বিয়ে না করে তোমায় বিয়ে করা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। আমাদের অধিকাংশ মেয়েদের অভিযোগ, ‘আমি বলে এই স্বামীর ভাত খেয়ে গেলাম। অন্য কোনো মেয়ে হলে ছ’মাসও টিকতো না।’ আসলে আল্লাহ তায়ালা মেয়েদের এক অসাধারণ ধৈর্যশক্তি দান করেছেন, সেজন্যই তাঁরা মা। মায়ের তথা স্ত্রীজাতির পায়ের নিচে রয়েছে ছেলে বা পুরুষের জান্নাত। তাই সংসারক্ষেত্রে সেই ধৈর্যশক্তির প্রদর্শন একজন স্ত্রীকে করে সম্মানিতা, সংসারকে করে জান্নাতের টুকরো?
পরিবারে স্ত্রীর যেমন দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে, ঠিক তেমনি স্বামীরও দায়িত্ব-কর্তব্য আছে। বরং তার আরও বেশি। একটা মেয়ে নিজের পরিবার-পরিজন ছেড়ে স্বামীকে অবলম্বন করে থাকছে, সেজন্য স্ত্রীর প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া প্রয়োজন, স্নেহ-মমতা-ভালোবাসা প্রদর্শন করা উচিৎ। স্ত্রীর বাড়ি থেকে ‘এই আনো, সেই আনো’ বা যৌতুকের জন্য শারীরিক/মানসিক নির্যাতন করা অমানবিক। উপরন্তু স্বামীর উচিৎ, স্ত্রীর ভরণপোষণ এবং সাধ-আহ্লাদ পূরণ করার সর্বাত্মক চেষ্টা করা।
সুখী পরিবার গঠনে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের থাকতে হয় অপরিসীম ভূমিকা। আল্লাহ স্বামী-স্ত্রীকে একে অন্যের পরিপূরক করেছেন। তাঁদের উভয়ের অংশগ্রহণেই একটি পরিবার সুখী ও শান্তির নীড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। কিছু পদক্ষেপে সংসার হতে পারে আসলেই বেহেশতের বাগানÑ
১) পরিবারের যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে স্বামী-স্ত্রী পরামর্শ করা। ২) শ্বশুর, শাশুড়ি বা বয়োজেষ্ঠদের যথাযথ সম্মান করা এবং তাঁদের জন্য থাকা-খাওয়া, চিকিৎসার উত্তম ব্যবস্থা করা। ৩) সন্তানদের ভরণপোষণ ও শিক্ষার যথোপযুক্ত ব্যবস্থা করা। ৪) পরিবারে নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা এবং পরিবেশ সৃষ্টি করা। ৫) পরিবারের সকল সদস্যকে মূল্যায়ন ও স্নেহ-মমতা-সম্মান প্রদান। ৬) সকলের খোঁজখবর নেয়া। কারো সমস্যা হলে দূর করার চেষ্টা করা। ৭) পারিবারিক আনন্দ ভ্রমণ বা নির্মল বিনোদনের ব্যবস্থা করা।