পড়াশোনায় মনীষীদের উপদেশ মাহফুয আহমদ
জীবনে ভালো কোনো কাজ করতে চাইলে, আরও স্পষ্ট করে বলি, জীবনে কিছু হতে চাইলে- ভালো বই অধ্যয়নের কোনো বিকল্প নেই। প্রচুর পড়তে হবে। তথ্যজ্ঞান সমৃদ্ধ করতে হবে। আসুন পড়া সংক্রান্ত বিক্ষিপ্ত কিছু তথ্য জেনে নিই: মনে থাকে না? হুজুর! বই তো অনেক পড়ি, কিন্তু মনে কিছু থাকে না? আচ্ছা! এই নাও খেজুর। এটা চিবিয়ে খাও। এবার বলো তো! তুমি কি বড় হয়ে গেছ? না। কিন্তু খেজুরটি তোমার সারা শরীরে ছড়িয়ে গেছে। বিক্ষিপ্ত হয়েছে প্রত্যক অঙ্গপ্রত্যঙ্গে। সম্পূরক শক্তি হিসেবে মিশে গেছে হাড়, রগ, নখ, চুল, চামড়া, গোশত প্রতিটির সাথে। ঠিক তেমনি! তুমি যে বই পড়ো তাও বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। সেটা তোমার ভাষাকে শক্তিশালী, তথ্যজ্ঞানকে সমৃদ্ধ, চরিত্রকে পরিমার্জিত, বলা ও লেখার ভঙ্গিকে উন্নত করে দেয়। যদিও তুমি তা না বুঝো। (উস্তাদ-শাগরেদের কথোপকথন)
আরব বিশ্বের সাড়াজাগানো লেখক, গবেষক ও শিক্ষাবিদ ড. আবদুল কারিম বাক্কার হাফিযাহুল্লাহ তাঁর এক নিবন্ধে বলেন, ‘আজ আমার নিকট সচেতন ও মেধাবী একজন যুবক আসলো। নিজেকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে আমার সামনে তার ব্যক্তিগত কার্যপ্রণালী তুলে ধরলো। সে বললো, তার এই কার্যপ্রণালী সাতটি গতিপথের সমষ্টি। আমি ওকে বললাম, এভাবে জ্ঞান বিষয়ক এত বেশি টুকিটাকি থেকে তুমি উপকৃত হতে পারবে না। বরং উত্তম হলো, তুমি তোমার নির্ধারিত পড়ার সময় (ওই যুবক প্রতিদিন ৪-৫ ঘণ্টা অধ্যয়ন করে, মাশাআল্লাহ!) তিনভাগে বিভক্ত করে নিবে। ৫০% নির্দিষ্ট ওই বিষয়ের জন্যে; যার দ্বারা তুমি নিজ রিজক উপার্জন করবে অথবা যে বিষয়ে তুমি দক্ষতা, ব্যুৎপত্তি ও বিশেষত্ব অর্জন করতে চাও। ২৫% ধর্মীয় পড়াশোনার জন্যে এবং ২৫% সাধারণ জ্ঞানের জন্যে। একই উপদেশ আমি আমার সকল ছেলেমেয়েকে করছি। ভালোমন্দ সবকিছু পড়ে জীবন নষ্ট করো না। তোমাদের প্রত্যেকের একটা নির্দিষ্ট বিষয় থাকা চাই; যাতে সে চেষ্টা-প্রচেষ্টা করে নিজের যোগ্যতার বিকাশ ঘটাবে। কোনো বিষয়ে যদি তুমি প্রত্যহ আধা ঘণ্টা করে পড়ো তবে পাঁচ বছরে তুমি ওই বিষয়ের প-িত হয়ে উঠবে। অতএব খুব ভালো করে চিন্তা করো। আল্লাহ তোমাদের রক্ষা করুন।’
ফিকহে শাফিঈর প্রসিদ্ধ প-িত, ইমাম আবু ইসহাক আশ শিরাজি রাহ. (মৃ. ৪৭৬ হি.) নিজের শিক্ষাজীবনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, আমি প্রত্যেকটি কিয়াস বা ফিকহি মাসয়ালা এক হাজার বার রিপিট (তাকরার) করতাম। এক হাজার বার পূর্ণ করে ভিন্ন মাসয়ালার প্রতি একই পদ্ধতিতে মনোযোগী হতাম। অনুরূপভাবে আমি প্রতিটি দারস বা পাঠ এক হাজার বার রিপিট করতাম। মাসয়ালায় যদি এমন কোনো দীর্ঘ কবিতা থাকতো; যার মাত্র একটি শ্লোক এখানে প্রতিপাদ্য- তথাপি আমি পুরো লম্বা কবিতাটি মুখস্থ করে ফেলতাম। (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা; যাহাবি, ১৮/৪৫৮) আমি, আপনি হয়তো এমন কঠোর পরিশ্রম করতে অভ্যস্ত নই, আমাদের হয়তো এমন সাধ, সাধ্য ও সাহস নেই- তদুপরি আমাদের পূণ্যবান পূর্বসূরিদের জীবনচরিত থেকে এজাতীয় বিষয়গুলো জেনে রাখা দরকার। যাতে করে এই ইলম আমাদের পর্যন্ত পৌঁছাতে সালাফে সালিহিন কী অসাধ্য সাধন করেছেন, কত দুর্গম পথ পাড়ি দিয়েছেন- সেটা আমরা জানি এবং মনে রাখি। এসব জানার আরেকটি বড় ফায়দা এই যে, নিজেদের জ্ঞানের পরিধিকে তাঁদের জ্ঞানসমুদ্রের সঙ্গে তুলনা করার দুঃসাহস যেন আমরা না দেখাই।