বাংলাদেশ ও বিশ্ব রাজনীতির ক্ষেত্রে ২০১৮ সাল
অলিউল্লাহ নোমান
বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য ২০১৮ সাল যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেটা সবাই জানেন। বহুল আলোচিত জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা এ বছরে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের নামে অনেকটা সিলেকশন হয়েছিল। ১৫৪ আসনে কোনো ভোটই লাগেনি। যে আসনগুলোতে ভোট হয়েছিল সেগুলোও ছিল সিলেকশনের মতোই। দখলদার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইশারায় কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার হিম্মত ছিল না। শুধু নিয়ম রক্ষার জন্যই শেখ হাসিনা তখন অর্ধেকের কম আসনে ভোটের আয়োজন করেছিলেন। সেখানেও তার সিলেকটেড প্রার্থীদের বিজয় আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল। ৫ জানুয়ারি ওয়াক ওভার দিয়েছিল ২০ দলীয় জোট। এ সিলেকশনের ভোটে নির্বাচিত সরকারকেও এক রকম ওয়াক ওভার দেওয়া হয় ৫ জানুয়ারির পর থেকেই। ৫ জানুয়ারির পর থেকেই আন্দোলন সংগ্রাম বিমূখ হয়ে পড়ে বিএনপি। যদিও ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারিকে সামনে রেখে একটি ঝটিকা আন্দোলন হয়েছিল ৪ মাসব্যাপি। ৫ জানুয়ারির পরই তিনি নিজেকে আরও গুছিয়ে নেন। আঁট ঘাট বেধে সামনে এগিয়ে যেতে থাকে শেখ হাসিনার দখলদার সরকার। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত ইন্ডিয়ার ইলেকশনে বিজয়ী হয় নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি। ইন্ডিয়ার ইলেকশনের আগে থেকেই রীতিমতো তোলপাড় বিএনপিতে। মোদী প্রধানমন্ত্রী হলে বাংলাদেশে ক্ষমতার পরিবর্তন আসন্ন। মোদীর বিজয়ে মনে হয়েছিল বিএনপি ইন্ডিয়ায় জিতেছে। কিন্তু ৪ বছর হয়ে গেল। ইন্ডিয়ার বাংলাদেশ নীতিতে পরিবর্তন এসেছে এমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। কেন তারা এতটা উল্লাসিত ছিল মোদীর বিজয়ে, এখনো সেটা রহস্যজনক! ২০১৬ সালের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত হয় আমেরিকার ইলেকশন। হিলারীর পক্ষে আজান দিয়ে বিএনপি মাঠে নামে। দলটির নেতাদের কথা বার্তা শুনলে মনে হত, বিএনপি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। কিন্তু ওবামার প্রথম আমলে হিলারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। তার পররাষ্ট্র মন্ত্রিত্ব অবস্থায় ড. ইউনূসকে ঘাড়ে ধরে গ্রামীন ব্যাংক থেকে বের করে দিল আওয়ামী লীগ। কই, হিলারী তো রক্ষা করতে পারলেন না ইউনূসকে। আমেরিকার ইলেকশনে বিজয়ী হয়ে প্রেসিডেন্ট হলেই বা কি করতেন! বাংলাদেশে ক্ষমতার পরিবর্তন এনে দিতে পারতেন কি তিনি? সেই প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই। হিলারীর বিজয় চাই। দুর্ভাগ্য হিলারী পরাজিত হলেন। আওয়ামী লীগের লোকজন মুচকি হাসি দিতে থাকল। শুরু থেকেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে আওয়ামী লীগ। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পোনে দুই মাসের মাথায় পিলখানায় ৫৭ জন আর্মি অফিসার খুন করা হল। শেখ হাসিনা নিজে ক্যান্টনমেন্টে গিয়ে সেনা অফিসারদের ক্ষোভ মোকাবেলা করলেন তখন। সেটা ছিল তার জন্য অত্যন্ত কঠিন চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জে বিজয়ী হন শেখ হাসিনা। যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে ফাঁসিতে ঝুলানোর চ্যালেঞ্জটা কম ছিল না। বিচারের নামে রীতিমতো নাটক সাজিয়ে একের পর এক নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলানো হল। তছনছ করে দেওয়া হয়েছে জামায়াতে ইসলামী নামের রাজনৈতিক দলটিকে। এজন্য তেমন কোনো বেগ পেতে হয়নি শেখ হাসিনাকে। সবকিছুই করেছেন তিনি অত্যন্ত দক্ষতা ও সাহসিকতার সাথে। বিরোধী জোটের সাথে কোনো চ্যালেঞ্জে এখন পর্যন্ত পরাজিত হতে দেখা যায়নি তাকে।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক /সম্পাদনা : খন্দকার আলমগীর হোসাইন