সেন্টমার্টিন যেতে পারেন ভ্রমণে
সেন্টমার্টিন দেখাও ভাবনার বিষয়। আট কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট সেন্টমার্টিনের দৈর্ঘ্য প্রায় চার কিলোমিটার আর প্রস্থ দুই কিলোমিটার। পূর্বে এর নাম ছিল নারিকেল জিনজিরা। ৭ম-৮ম শতাব্দীতে সুদূর মধ্যপ্রাচ্য থেকে আরব বণিকরা জাহাজযোগে আকিয়াব ও রেঙ্গুন যাতায়াতের সময় এ দ্বীপে সাময়িক বিশ্রাম নিতেন। এই দ্বীপটি কাকডাকা ভোরে নবজাতক শিশুর মতো সকাল ৭টা হতে ১০টায় মনে হবে ১০/১২ বছরের কিশোরী বিকাল ৪টা হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত মনে হবে ১৮ বছরের যুবতী। যাকে এই মাত্র পার্লার থেকে সাজিয়ে আনা হয়েছে। যারা দিনে গিয়ে ঐ দিনই ফেরত আসে, ভর দুপরে ৩ ঘণ্টা ঘুরার সময় পায়, তখন দ্বীপের রূপ ৭০ বছর বয়সী কঙ্কালসার নারীর মতো। তা দেখে ভ্রমণকারী মন খারাপ করে ফের জাহাজে টেকনাফ ফিরে আসে, ফেরার পথে নাফ নদীর ডানে মিয়ানমার বামে শাহপরী দ্বীপ, আর শত শত গাঙচিলের জাহাজের পিছু পিছু ছুটে চলার নয়নাভিরাম দৃশ্য, নদী-পাহাড়ের আড়ালে সূর্যাস্ত, আর কিছু ছবি তোলা দিয়ে সেন্টমার্টিন সফরের করুন সমাপ্তি।
এই একই ব্যক্তির ট্যুরটা যদি এমন হতোÑ দুই রাত থাকার পরিকল্পনা নিয়ে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে সে জাহাজে উঠার সময় ৪/৫ প্যাকেট চিপস নিয়ে উঠলেন, জাহাজ ছাড়ার প্রথম ১৫/২০ মিনিট ক্যামরাটা অন করে নদী আর পাহাড়ের সুন্দর দৃশ্যের কিছু ছবি তুললেন, এবার চিপসের প্যাকেট নিয়ে একদম জাহাজের পিছনটায় চলে আসুন। নিজে খান এবং গাঙচিলকেও খাওয়ান। কিছুক্ষণের মাঝে শতাধিক গাঙচিল ডাকা ডাকি শুরু করে দিল আপনার থেকে ৫/৭ ফুট দূরে। আপনি ছোঁড়ছেন চিপস, পানিতে পড়ার আগেই টপ টপ গিলে নিচ্ছে সী বার্ড, আপনার চারপাশে ক্যামরাগুলো ততক্ষণে অভিরাম ক্লিক ক্লিক শুরু করে দিয়েছে, আপনিও সেলফি তুলে নিজের অ্যালবামকে স্মরণীয় করে রাখতে পারেন। এতক্ষণে জাহাজ নাফ নদী পেরিয়ে সাগরে এসে পড়েছে, নতুন হলে আপনার মাথা একটু ঘুরপাক খেতে পারে, জাহাজের ক্যান্টিন হতে এক কাপ কপি খেয়ে নিন, ভালো লাগবে। নিজের আসনে বসে বিশ্রাম নিন, ক্যামরায় ক্লিক করা পিকগুলো একঝলক দেখে নিতে পারেন মনটা ফুরফুরে হয়ে যাবে। এ এলাকায় শীত কম, দুপুরে রোদের তাপ বেশি, আনন্দে থাকে বলে টের পায় না ভ্রমণকারীরা টের পায় বাড়ির পরিবেশে ফেরার পর যখন হাত-পা ও মুখের চামড়া উঠতে শুরু করে। তাই ছাতা অথবা সানস্ক্রিন ক্রিম ব্যবহার করবেন দ্বীপে। জাহাজ হতে নেমে জেটি ঘাটে দোকানে বসে ৫০ টাকায় একটা ডাব খান, তার পর সাথে অনেক মালপত্র না থাকলে হেটেই চলে যান আপনার বুকিং দেওয়া কটেজে। কটেজ অবশ্যই সমুদ্র পাড়ে হতে হবে। তা না হলে সেন্টমার্টিন যাওয়াই বৃথা। কটেজে খাবারও বিশ্রাম সেরে সাড়ে তিনটায় চলে যান ছেড়াদীয়া দ্বীপে। বড় বোটে উঠবেন নিরাপদ থাকবেন। সূর্যাস্তটা দেখে ফিরে আসবেন। আপনি কি জানেন পৃথিবীর সব দ্বীপ ভাটার সময় তার আসল রূপ/সৌন্দর্য প্রকাশ করে। বিয়ে বাড়িতে নতুন বউ দেখানোর সময় একজন গোমটা সরিয়ে বউ দেখায়, সেন্টমার্টিন দ্বীপ ও তেমনি প্রতি ১২ ঘণ্টায় একবার তার ঘোমটা ফেলে দেয়, সেই সময়টার নাম ভাটা, তাই অনুরোধ দুই বেলা ভাটার সময় কটেজে না থেকে বেরিয়ে পড়ুন। বিধাতার সৃষ্টি কৌশল কি নিখুঁত, কি অপরূপ সুন্দর, কি কঠিন নিয়ন্ত্রণ, কি অসীম তার ক্ষমতা! দেখুন, ভাবুন। আপনার ভ্রমণের সময় টা যদি পূর্ণিমার রাত পড়ে তো সোনায় সোহাগা। আপনি ভাগ্যবান ১০০ ভাগ সফল আপনার ট্যুর। রাত টা কাটিয়ে দিতে পারেন বীচ পাড়ে। প্রতি ৩০ দিনের মধ্যে বড় জোয়ার-ভাটা হয় পূর্ণিমার রাতে। দিনের মতো আলো, বিশাল ঢেউ যখন কূলে আঁচড়ে পড়ে ঢেউয়ের ফেনায় রেডিয়াম জ্বলে উঠে, এ রাতে ভাটার সময় পানি অনেক দূরে চলে যায় (প্রায় ১ কিলোমিটার) এই দ্বীপকে সাগর কন্যা বলে অনেকেই। সাগর কন্যার আরও দুই ছোট বোন আছে তারা ছেঁড়াদীয়া ও দারুচিনি দ্বীপ নামে পরিচিত। পূর্ণিমার সময় দুই বোনের বাড়িতে পায়ে হেঁটে যাওয়া যায়।
লেখক : পর্যটক ও সমাজকর্মী
সম্পাদনা : খন্দকার আলমগীর হোসাইন