ডিআইজি মিজানকে প্রত্যাহার
ইসমাঈল হুসাইন ইমু : অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে বিয়ে করাসহ নানা অপকর্মের জন্য অভিযুক্ত পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমানকে প্রত্যাহার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। তাকে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে মিজানকে প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন পুলিশ সদর দফতেরর এআইজি (মিডিয়া) সোহেলী ফেরদৌস।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ডিআইজি মিজানের নৈতিক স্খলনের কথা জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে তদন্তের পর জানতে পারবো আসলে সে কতটা দোষী। এখন প্রাথমিকভাবে অভিযোগের ভিত্তিতে ডিআইজি মিজানকে ডিএমপি থেকে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়েছে। কত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশ সপ্তাহ চলছে। দুই-একদিন পর আইজিপি-ডিএমপি কমিশনারের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত কাজ শুরু করবে। কোনো ব্যক্তির দায় বাহিনী নেবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। পুলিশের অনেক সদস্যও বিভিন্ন অপরাধে কারাগারে রয়েছে।
ভুক্তভোগী মরিয়ম আক্তার ইকো জানান, গত ১৪ জুলাই তাকে পান্থপথের বাসা থেকে এক রকম কৌশলে গাড়িতে তুলে জোরপূর্বক ৩০০ ফুট এলাকায় নিয়ে যান ডিআইজি মিজান। সেখানে মারধর করে রাতে ইকোকে তার বেইলি রোডের বাসায় নিয়ে আসেন। সেখানে তাকে সুস্থ করার কথা বলে ওষুধ খাইয়ে অজ্ঞান করে ফেলেন। এ সময় সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের ডাক্তার বন্ধু বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন গাজী শামীম হাসান উপস্থিত ছিলেন। পরদিন দুপুর ১২টার দিকে ঘুম থেকে জেগে আত্মহত্যা করবেন বলে দৌড়ে রান্না ঘর খুঁজতে থাকেন। রান্না ঘরে ঢুকে গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে ওড়নায় আগুন লাগিয়ে দেন। এ সময় খবর পেয়ে ডিএমপি কার্যালয় থেকে ছুটে আসেন মিজানুর রহমান। ইকোকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। আশ্বাস দেন তাকে তার বাসায় রেখে আসবেন। এভাবে ১৪ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত ৩ দিন মেয়েটিকে বাসায় আটকে রাখেন তিনি। পরে তার মাকে ডেকে এনে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ইকোকে বিয়ে করেন মিজান। তাকে লালমাটিয়ায় ৫০ হাজার টাকার ভাড়া ফ্ল্যাটে নিয়ে গোপনে সংসার শুরু করেন তারা। ওই ফ্ল্যাটের নিচে সাদা পোশাকে সার্বক্ষণিক পুলিশের দু’জন সদস্যকে পাহারায় রাখা হয়। এভাবেই কেটে যায় ৪ মাস। একদিন তিনি অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মিজানকে স্বামী হিসেবে পরিচয় দিয়ে অফিসে মুডে থাকা একটি ছবি ফেসবুকে আপলোড করেন। এতে ক্ষিপ্ত হন মিজানুর রহমান। এ ঘটনার পর তাদের সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে। ইকো সমাজিকভাবে ডিআইজি মিজানের স্ত্রী পরিচয়ের অধিকার প্রতিষ্ঠায় অটল থাকেন। এর মধ্যে তার বিরুদ্ধে স্বামী-স্ত্রীর পরিচয় গোপন রেখে বাসা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলা করা হয়। এ মামলায় ইকোকে ১২ ডিসেম্বর পুলিশ গ্রেফতার করে। ১৩ ডিসেম্বর আদালতে হাজির করার পর তার জামিন আবেদন নাকচ হওয়ায় তাকে কারাগারে যেতে হয়। পরে তার বিরুদ্ধে ভুয়া কাবিন করার অভিযোগ এনে আরও একটি মামলা করা হয়। এছাড়াও ডিআইজি মিজান টেলিভিশনের সংবাদ পাঠিকা, মডেলসহ আরও কয়েক নারীর সংসার ভেঙ্গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্পাদনা : শাহানুজ্জামান টিটু