বিশ্ব ইজতেমা : দাওয়াত ও তাবলীগের প্রাণের সমাবেশ
মোস্তফা কামাল গাজী
প্রতিটি মুসলামানের অন্তরে ঈমান আছে। আছে আল্লাহ, রাসুল ও পরকালের ওপর অগাধ আস্থা ও বিশ্বাস। কিন্তু কিছু মুসলমানের ঈমান এতোটাই দুর্বল যে, তার ঈমান তাকে মসজিদে নিয়ে যেতে পারে না, রোজা রাখায় উদ্বুদ্ধ করতে পারে না। এ কারণে মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও পরকালে তাদের ঠিকানা হয় জাহান্নামে। মুসলিমজাতির এমন দুর্দশা ও অধঃপতন থেকে রক্ষার নিমিত্তে হজরত ইলিয়াস (র.) সাহাবায়ে কেরাম (রা.) এর পথ ও মতের ওপর ভিত্তি করে নতুন একটি পন্থা আবিষ্কার করেন। তা হলো, দাওয়াত ও তাবলিগ। দাওয়াত ও তাবলিগের মূলনীতি হলো, মুসলমানদের ঈমানের দিকে দাওয়াত দেয়া আর কাফেরদের ইসলামের দিকে দাওয়াত দেয়া। যাতে উভয় শ্রেণিই জাহান্নামের মর্মন্তুদ শাস্তি থেকে রক্ষা পায়। দওয়াত ও তাবলিগের এ পন্থা রচনার কিছুদিন পর মুরুব্বিগণ সমবেত একটি ইজতিমার প্রয়োজন অনুভব করেন। যেনো একটি মজমায় সকলে একত্রিত হয়ে দ্বীনের এ ধারাকে আরো বেগবান করার সমবেত ও শক্ত প্রয়াস পাওয়া যায়। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বপ্রথম ১৯৪৬ সালে কাকরাইলে মসজিদের ভেতর ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামের হাজি ক্যাম্পে ও ১৯৯৮ সালে নারায়নগঞ্জে ইজতিমা অনুষ্ঠিত হয়। লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৯৬৬ সালে টংগীর পাগার গ্রামের একটি নাঠে ইজতিমা অনুষ্ঠিত হয়। সে সময় বিদেশি কয়েকটি জামাত অংশ নেয়ায় এর নাম হয় ‘বিশ্ব ইজতিমা’। ১৯৬৭ সালে টংগীর তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতিমা অনুষ্ঠিত হয় এবং প্রতিবছর সেখানেই হচ্ছে। দেশের আনাচেকানাচে থেকে প্রতিবছর ছুটে আসেন তাবলিগপ্রেমীরা। বিদেশি মেহমানদের সংখ্যাও কম নয়। উত্তরোত্তর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাদেরও। দ্বীনের ক্ষেত্রে সবাই সমান। নামাজ পড়ছেন এক কাতারে। চলাফেরা করছেন একসঙ্গে। খাবার খাচ্ছেন এক প্লেটে। হজ্জ ব্যতীত এতো বিশাল সমাবেশ আর পরস্পরে ভ্রাতৃত্বের অপূর্ব মেলবন্ধনের চিত্র বিশ্বে অন্য একটি নেই। প্রতিবছরের মতো এবারও বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হবে ১২-১৪ জানুয়ারি আর দ্বিতীয় পর্ব ১৯-২১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। ইজতেমার প্রতি পর্বের শেষ দিন আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিনের এ মহান সমাবেশে অংশ নেয়া প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যক। তাই আসুন, দলে দলে তাতে আমরা অংশগ্রহণ করি ও আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করি।