কোরআন ও হাদিসের আলোকে দাওয়াত ও তাবলীগ
জাকারিয়া হারুন
দাওয়াত ও তাবলিগ। প্রেরণার বাতিঘর। বহু পথ হারানো ব্যক্তির সঠিক পথ ফিরে পাওয়ার মাধ্যম। শেষ নবি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রেখে যাওয়া আমানত। উলামায়ে কেরামের একনিষ্ঠ অক্লান্ত পরিশ্রমের স্বার্থক ফসল। বহু ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে আজ এ অবস্থানে পৌঁছেছে। পৃথিবীর এমন কোন প্রান্ত খুঁজে পাওয়া দুস্কর যেখানে তাবলিগের সাথীদের পদচিহ্ন পৌঁছেনি ?
দাওয়াত ও তাবলীগ সম্পর্কে কুরআন বলেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকে উত্তম বলে পবিত্র কোরআন মহান আল্লাহ বলেন, সে ব্যক্তির চেয়ে কার কথা উত্তম হতে পারে, যে মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকে, এবং নিজেও সৎকাজ করে, আর বলে আমি মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা হা-মীম সিজদাহ : আয়াত : ৩৩) পবিত্র কোরআনে রাসুল (সা.) কে মানুষের কাছে মহান আল্লাহর বাণী পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ‘হে রাসূল! আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তা আপনি প্রচার করুন। যদি আপনি তা না করেন তাহলে আপনি আল্লাহর বার্তা প্রচার করলেন না। (সূরা মায়েদা : আয়াত : ৬৭) অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন,‘আর যেন তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের প্রতি আহবান করবে, ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই সফলকাম’। (সূরা আলে ইমরান : আয়াত : ১০৪)
উম্মতে মুহাম্মদিকে শ্রেষ্ঠ উম্মত বানানোর কারণ মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি, মানবজাতির (কল্যাণের) জন্য তোমাদের বের করা হয়েছে। তোমরা ন্যায় কাজে আদেশ এবং অন্যায় কাজে নিষেধ কর । এবং আল্লাহতে বিশ্বাস কর’। (সূরা আলে ইমরান : আয়াত : ১১০) বিশ^ মানবতার মুক্তিরদূত রাসুলু (সা.) বলেন, ‘দীন হলো নসিহত। সাহাবিগণ বললেন, কার জন্য? রাসুলু (সা.) বললেন, আল্লাহর জন্য। তাঁর কিতাবের জন্য। তাঁর রাসুলু (সা.) এর জন্য। মুসলিমগণের নেতৃবর্গের জন্য এবং সাধারণ মুসলিমদের জন্য’। ( সহিহ মুসলিম)
প্রিয়নবি (সা.) সাহাবিদের থেকে সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধের বাইয়াত গ্রহণ করতেন। উবাদাহ ইবনু সামিত বলেন, ‘রাসুলু (সা.)-এর হাতে বাইয়াত করি আনুগত্যের এবং সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধের এবং এ কথার ওপর যে, আমরা মহান আল্লাহর জন্য কথা বলব এবং সে বিষয়ে কোন নিন্দুকের নিন্দা বা গালি গালাজের তোয়াক্কা করব না’। (মুসনাদে আহমাদ) বিদায় হজে রাসুল (সা.) দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘উপস্থিত লোকেরা যেন দ্বীনের এ দাওয়াত অনুপস্থিত লোকদের কাছে পৌছে দেয়’ এর মাধ্যমে সমস্ত উম্মতে মুহাম্মদীই তাবলীগ তথা দ্বীন প্রচারের ব্যাপারে দায়িত্বশীল হয়ে যায়। যে ব্যক্তি দ্বীন সম্পর্কে যা জানে তাই অন্যের কাছে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্বশীল। (সহিহ বুখারি : হাদিস : ৩২৭৪)