ঐক্য প্রতিষ্ঠায় ইমাম মালিক (রহ.) এর দূরদর্শিতা
মাহফুয আহমদ
ইমাম মালিক (রহ.) (মৃ. ১৭৯হি.) থেকে একাধিক সূত্রে বর্ণিত যে, তিনি যখন “মুয়াত্তা” সংকলন করলেন তখন খলিফা মানসুর (কোনো বর্ণনামতে অন্য খলিফা) আরজ করলেন; আপনি অনুমতি দিলে আমি প্রত্যেক দেশের গর্ভনরের নিকট এ মর্মে লিখে পাঠাব যে, সবাই যেন এই কিতাবের হাদিস অনুযায়ী আমল করেন এবং বিচারকার্য সম্পাদন করেন। ইমাম মালিক (রহ.) বললেন, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই উম্মাহকে নিয়ে জীবন অতিবাহিত করেছেন। জিহাদের জন্য তিনি বাহিনী পাঠাতেন, নিজেও বের হতেন। কিন্তু তাঁর জীবদ্দশায় তেমন বেশি দেশ বিজিত হয়নি। তাঁর পরে হযরত আবু বকর (রাযি.) খলিফা নির্বাচিত হন; তখনও বিজিত অঞ্চলের সংখ্যা কম ছিল। তাঁর পর হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযি.) এর খেলাফতকালে বহু দেশ বিজিত হয়। আর তখন ওই সব অঞ্চলের অধিবাসীদের দ্বীনি তা’লিমের জন্য সাহাবায়ে কেরামকে মুয়াল্লিম ও শিক্ষক হিসেবে পাঠানো ছাড়া কোনো বিকল্প ছিল না। সুতরাং প্রত্যেক অঞ্চলের মুসলমানগণ স্বীয় মুয়াল্লিম সাহাবি থেকে যা শুনেছেন-শিখেছেন তার ওপরই আমল করতে লাগলেন। এই নিয়মই পরবর্তীতে অব্যাহত ছিল। অতএব এখন যদি আপনি লোকদের নিজ অঞ্চলের আমল ছাড়া অজানা নতুন কোনো আমলের দিকে আহবান করেন তবে তারা এটাকে কুফরি গণ্য করবে। তাই আপনি প্রত্যেক অঞ্চলে প্রচলিত ইলম ও আমলের ওপরই লোকদের ছেড়ে দিন। আর এই ইলম (মুয়াত্তা) নিজের জন্য গ্রহণ করতে পারেন। তখন খলিফা বললেন, আপনি দূরদর্শী কথা বলেছেন।” (তাকদিমাতুল জারহি ওয়াত তা’দিল; ইবনে আবি হাতিম, পৃ. ২৯, [আদাবুলিখতিলাফ; শায়খ আওয়ামা, পৃ. ৪০-এর সূত্রে] আত তাবাকাতুল কুবরা; ইবনে সা’দ, [আল জুযউল মুতাম্মিম] পৃ. ৪৪০-৪৪১, মদিনা মুনাওয়ারাহ, ১৪০৩ হি.)
হাফিজ ইবনে তাইমিয়া (রহ.) (মৃ. ৭২৮ হি.) লিখেন, “ইজতিহাদি বিষয় নিয়ে বিবাদ-বিসংবাদে লিপ্ত হওয়ার কোনো অবকাশ নেই। যে অঞ্চলে যে সুন্নত চালু আছে সেখানে সেভাবেই চলতে দেয়া উচিত। ভিন্ন কোনো সুন্নত চালু করা ফিতনা সৃষ্টি করার শামিল। এ জন্যেই খলিফা হারুনুর রশিদ যখন ইমাম মালিক (রহ.) এর কাছে পরামর্শ চেয়েছিলেন যে, আমি সবাইকে আপনার “মুয়াত্তা” এর হাদিস অনুযায়ী আমল করতে হুকুম জারি করে দিই? ইমাম মালিক (রহ.) তাঁকে বারণ করে বলেন, এটা ঠিক হবে না; কারণ সাহাবায়ে কেরাম দুনিয়ার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়েছিলেন এবং প্রত্যেক জনপদের নিকট ইতোমধ্যে কিছু হাদিস পৌঁছে গেছে।” (মাজমূউল ফাতাওয়া; ইবনে তাইমিয়া, ৩০/৭৯) একই বিষয়ে শায়খুল ইসলাম হাফিজ ইবনে তাইমিয়া (রহ.) আরও বলেন, “মানুষের জন্যে উচিত হলো, এ ধরনের মুস্তাহাব তরক করে হলেও অন্যের মনরোঞ্জনের চেষ্টা করা। কারণ ইসলাম ধর্মে এ রকম মুস্তাহাব বিষয়ের চেয়ে অন্যের মন খুশ রাখার গুরুত্ব আরো বেশি। যেভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাইতুল্লাহ আসলরূপে পূননির্মাণের ইচ্ছা বাস্তবায়িত করেননি; লোকদের মন জয় করার স্বার্থে। যেভাবে হযরত ইবনে মাসউদ (রাযি.) সফর অবস্থায় নামায পূর্ণ পড়তে হযরত উসমান (রাযি.) এর প্রতিবাদ করলেন আবার তিনি নিজেই তাঁর পেছনে মুসাফির অবস্থায় পূর্ণ নামায আদায় করলেন। তারপর বললেন, ঝগড়া-বিবাদ নিকৃষ্টতম বিষয়।” (মাজমূউল ফাতাওয়া, ২২/৪০৭) লেখক: আলোচক, ইকরা টিভি, লন্ডন