রাসুল (সা.) যেভাবে ঘুমাতেন
মুফতি আখতার ফয়জী
রাসুল (সা.) আদর্শেই মানব জীবনের কল্যাণ নিহিত। সর্বক্ষেত্রেই মেনে চলা দরকার রাসুল (সা.) কে। ঘুম মানুষের জীবনেরই একটা অংশ। ঘুম ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। তাই ঘুমেও আছে রাসুল সা এর কিছু সুন্নাত। সেই সুন্নতগুলোই বলবো আজ। নামাযের পর যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি ঘুমাতে চেষ্টা করা, যাতে তাহাজ্জুদের জন্য উঠা সহজ হয়। (বুখারী, হাদীস নং- ৫৪৭) নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যমীন, চৌকি, কাপড়ের বিছানা, চাটাই, চামড়ার বিছানা ইত্যাদির উপর শয়ন করেছেন বলে হাদীসে বর্ণিত আছে। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ২০৬৯/ শামায়িলে তিরমিযী, পৃ. ২২) উযূ করে শয়ন করা। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৬৩১১) শোয়ার পূর্বে বিছানা ভালভাবে ঝেড়ে নেয়া। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৬৩২০) শয়নের পূর্বে পরিহিত কাপড় পরিবর্তন করে ঘুমের কাপড় পরিধান করা। (আল মাদখাল,৩,১৬২)
শয়নের পূর্বে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে নিম্নে বর্ণিত কাজগুলো করা : ১. দরজা বন্ধ করা। ২. মশক বা পানির পাত্র এবং খাদ্য দ্রব্যের পাত্র ও অন্যান্য পাত্রসমূহ ঢেকে রাখা। যদি ঢাকার জন্য কোন বস্তু না পাওয়া যায়, তাহলে ‘বিসমিল্লাহ’ পড়ে তার মুখে একটি লাটি বা ছড়ি রেখ দেয়া, ৩. বাতি নিভানো। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৫৬২৩-২৪)
ঘুমানোর পূর্বে উভয় চোখে তিনবার করে সুরমা লাগানো। (মুস্তাদরাক, হাদীস নং- ৮২৪৯) ঘুমানোর পূর্বে কিছু পরিমাণ কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা। যথা : আলহামদু শরীফ, সূরা কাফিরূন, আয়াতুল কুরসী, আমানার রসূল থেকে সূরা বাক্বারার শেষ পর্যন্ত, সূরা মুলক, আলিফ লাম মীম সিজদাহ ইত্যাদি তিলাওয়াত করা বেশি পড়া সম্ভব না হলে কমপক্ষে ছোট ২/ ৩ টি সূরা পড়ে নেয়া। (তাবারানী কাবীর হাদীস নং-২১৯৫/ আল আদাবুল মুফরাদ, হাদীস নং- ১২০৯/ বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৩২৭৫) ঘুমানোর পূর্বে কয়েকবার দরূদ শরীফ পাঠ করা এবং তাসবীহে ফাতেমী অর্থাৎ ৩৩ বার সূবাহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পড়া। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৩১১৩) সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস প্রত্যেকটা তিনবার করে পড়ে হাতে দম করে যতটুকু সম্ভব মাথা হতে পা পর্যন্ত সমস্ত শরীরে হাত মুছে দেয়া। তিনবার এরূপ করা। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৫০১৭)
ঘুমানোর সময় ডান কাতে কিবলামুখী হয়ে শোয়া সুন্নাত। উপুড় হয়ে শয়ন করতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ এভাবে শয়ন করাকে আল্লাহ তা‘আলা পছন্দ করেন না। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৬৩১৪/ সহীহ ইবনে হিব্বান হাদীস নং- ৫৫৪৯) শয়ন করে এ দু‘আ পড়া। “বিইসমিকা রব্বি ওয়া যাতু জানবি ওয়া বিকা আরফায়ু ইন আমসাকতা নাফসি ফারহামহা ওয়া ইন আরসালতাহা ফাহফাজহা বিমা তাহফাজু বিহি ইবাদাকাস সালেহীন” (বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৬৩২০) লেখক: প্রধান মুফতি, জামিয়া মাদানিয়া রওজাতুল উলূম, কুমিল্লা।