‘শিক্ষকতা করে মানবেতর জীবন যাপন করছি’
ইসমাইল বাবু : শিক্ষামন্ত্রী ১০০০ টাকায় একজন মানুষ এক মাস চলতে পারবে? আমাদের ডাল, ভাত খাওয়ার সুযোগ করে দিন। জাতীয় বেতন স্কেল দিন। এবতেদায়ি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করে আমরা মানবেতর জীবন যাপন করে আসছি। প্রধানমন্ত্রী থেকে সুনির্দিষ্ট আশ্বাস চাই। আশ্বাস ছাড়া আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। তিলেতিলে মরার চেয়ে একেবারে মরাই ভালো। স্ত্রী ছেলেমেয়েকে এই মুখ আর দেখাতে চাই না। প্রাণ দিবো আন্দোলন থামাবে না। আমাদের অর্থনীতির সাথে আলাপকালে স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকরা এই সব কথা বলেন।
ভোলার বোরহান উদ্দিন উপজেলার দক্ষিণ হাসাননগর ওহিদিয়া স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদ্রাসা থেকে আসা প্রধান শিক্ষক মো. আবু হানিফ জানান, ছাত্রছাত্রীর উপবৃত্তির ব্যবস্থা সবই আছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে বই প্রদান করা হয়। শুধু নেই শিক্ষকদের বেতন ভাতা। বছরের পর বছর কেউ এক টাকাও বেতন পাই না। পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে শিক্ষকরা। বিভিন্ন সরকার বেতনের আশ্বাস দিলেও বাস্তবায়ন করেনি কেউ-ই। একই সঙ্গে গড়ে উঠা প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন স্কেল ঘোষণা হলেও, ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকদের ভাগ্যে তা জোটেনি। তবুও বেতন পাবেন এমন আশায় তারা শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন। অধিকাংশ মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা ভালো ফলও করেছে।
নাটোরের বরাইগ্রাম উপজেলার ভিটা কাজীপুর স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক তরিকুল ইসলাম জানান, এইভাবে জীবনের বোঝা আর কতদিন বইব? এবার সিদ্ধান্ত নিলাম দরকার হলে মরে যাবো। তবুও দাবি আদায় না হলে এখান থেকে যাবো না। এইভাবে আরও কয়েকজন শিক্ষক জানান, শিক্ষকতার পাশাপাশি হালচাষ, রিকশা চালিয়ে, দোকান, ইমামতি, প্রাইভেটসহ কোনোমতে জীবনযাপন করছেন তারা।
বগুড়ার শিবগঞ্জের গোপী বল্লাপুর স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক আবু তাহের জানান, আমার মাদ্রাসার অনেক শিক্ষক মারাও গেছেন বেতন না পেয়ে। কেউ কেউ বিনা বেতনে নিয়েছেন অবসর। সরকারিভাবে মাসিক ৫০০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করে আসছে। মাসিক ৫০০ টাকা ভাতা উল্লেখ থাকলেও, তা আবার তিন মাস পর পর দেওয়া হয়। তুলতে গেলে পড়তে হয় অনেক ভোগান্তিতে। ২০১৩ সালে জানুয়ারিতে বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা করা হয়েছে ।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ন্যায় সব সুযোগ সুবিধা প্রদান ও জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ বাস্তবায়ন দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু কেউ আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি। কেউ আমাদের কথা শুনেনি। ফলে আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। অন্যদের আমরা শিক্ষা দিলেও সমাজের মূলস্রোত থেকে ছিঁটকে পড়ে আছি। আমরা সামাজিকভাবে বিপন্ন। তবে এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি দাবি আদায় করে যাবো ফিরবো ইনশাআল্লাহ ।
ভোলার দৌলতখান নরগোরা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মোরসালীন জানান, আমাদের আর্তনাদ শোনার কেউ নেই? দিন আসে দিন যায়, বদলায় বছর, বদলায় প্রকৃতির রূপ-বৈচিত্র, আরও বদলায় মানুষের জীবন যাত্রার মান, শুধু বদলায় না স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলোতে কর্মরত শিক্ষক শিক্ষিকাদের ভাগ্য। কী দোষ করেছি আমরা, কেন-ই বা এতগুলো বছর শিক্ষার শেকড় ধরে রাখলেন, কে করবে সে মূল্যায়ন। এই দেশে আমাদের মূল্যায়ন হবে কি না জানি না?
বামনা উপজেলার বরগুনা উত্তর কাকচিরা দারুসসালাম স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক আবু হানিফ জানান, এই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ ২৭ বছর বিনা বেতনে চাকরি করে আসছি, আমরা শিক্ষিত জাতি গড়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছি। অথচ আমরা দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত ও বঞ্চিত কোনো সরকারই আমাদের দিকে তাকায়নি। খেয়ে না খেয়ে ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান করছি। এবার দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আমরণ অনশন চলবে ।