নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের কোন্দল রূপ নিচ্ছে সংঘর্ষ ও হানাহানিতে বিব্রত দল, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার নেয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
উম্মুল ওয়ারা সুইটি : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় মনোনয়ন এবং সুযোগ-সুবিধার বিষয় নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্য রূপ নিচ্ছে। সেই সঙ্গে সংঘাত ও হানাহানি বাড়ছে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলের সিনিয়র নেতারা ক্ষুব্ধ। দলের জেষ্ঠ্য নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন, আগামী ৬ মাসের মধ্যে দলীয় কোন্দল কমিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে।
আওয়ামী লীগ দলীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো অভ্যন্তরীর কোন্দল মেটানো। দীর্ঘ ১০ বছর দল ক্ষমতায় থাকার ফলে, দলীয় কর্মসূচির চেয়ে সুযোগ সুবিধা পেতে কর্মীরা বেশি ব্যস্ত ছিলো। দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম করার সুযোগ ছিলো কম। তাই সুবিধাভোগী ও সুবিধা বঞ্চিতদের মধ্যে বিরোধ চরম আকার ধারণ করেছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে এটি সংঘর্ষ ও হানাহানিতে রূপ নিচ্ছে।
দলের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন, গত এক সপ্তাহ ধরে নারায়নগঞ্জে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী ও সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের মধ্যকার বিরোধ নিয়ে দলীয় সভাপতি ক্ষুব্ধ। এছাড়া দলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ের জরিপের ফলাফলেও উঠে এসেছে, জরুরি পদক্ষেপ না নিলে, নির্বাচনের আগে এই সংঘাত ও হানাহানি আরো বাড়বে। জানা গেছে, গত দুই বছরে অভ্যন্তরীন কোন্দলে ৯০ জনের বেশি নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। আর সংঘর্ষেও ঘটনা ঘটেছে, অন্তত: দেড় শতাধিক।
একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেছেন, জেলা পরিষদ, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় বিভিন্ন স্থানে দলের ভেতর বিরোধ তৈরি হয়েছে তা এখনো অব্যঘু রয়েছে। তা ছাড়া এলাকায় প্রভাব বিস্তার ও বৈষয়িক স্বার্থসংশ্লিষ্ট কারণেও বিরোধ বা সংঘর্ষ হচ্ছে। কিন্তু এসব কমাতে যতটা কঠোর হওয়ার কথা, দল ততটা হতে পারছে না। তিনি বলেন, দলীয় সভানেত্রীর কাছে সব তথ্য রয়েছে। তিনি বলেছেন, দলে যারাই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে , তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন, নারায়নগঞ্জের ঘটনার জন্য যিনি দায়ী হবেন তার বিরুদ্ধে বহিস্কারের মতো সিদ্ধান্ত আসতে পারে। অন্যান্য এলাকাও যেনো নিজেদের মধ্যে অভ্যরীণ কোন্দল মিটিয়ে ফেলে তার ম্যাসেজ হিসেবে কাজ করবে এই সিদ্ধান্ত।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, একটি বড় দলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল থাকবেই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যারা নৌকার লোক তারা দলের প্রতি অনুগতই থাকবে। যারা অন্যদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য বিশৃঙ্খলা করবে তাদের জন্য কঠোর ব্যবস্থা।
আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, সাংগঠনিক ব্যবস্থা একটা চলমান প্রক্রিয়া। দলের বিভিন্ন পর্যায়ে কোন্দল মেটানোর চেষ্টা চলমান। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে দলের মধ্যে শৃঙ্খলা আনার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চলছে। বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে নিহত হন ৮৩ জন। ২০১৫ সালে এ সংখ্যা ছিল ৩৩। তার আগের বছর নিহত হন ৩৪ জন। ২০১৭ সালের প্রতিবেদন এখনো প্রকাশ করা হয়নি।