বিশেষজ্ঞ মত দিনে ৩শ গেলে একযুগেও শেষ হবে না রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন
উম্মুল ওয়ারা সুইটি : রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমার চুক্তি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞমহল। তারা চুক্তিকে ইতিবাচক বললেও বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় আরো বেশি। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিদিন তিনশ করে রোহিঙ্গা ফেরত পাঠানো হলে, একযুগেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য তাদের।
রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, ধীর গতিতে প্রত্যাবাসন করে মিয়ানমার আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর চাপ এড়াতে চাইছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক বিশ্বের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হয়েছে। এখন কূটনৈতিক তৎপরতা আরো বাড়াতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেছেন, প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়া পর্যন্ত সংশয় থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। শুরুতে ফেরত যেতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের সংখ্যাও কম থাকবে। কারণ যেভাবে নির্যাতন করে তাদের তাড়ানো হয়েছে তাতে ফেরতে এখনো অনেকে আগ্রহী নন। বাংলাদেশকে ভালোভাবে মনিটর করতে হবে বিষয়টি। কিন্তু মিয়ানমার যদি তার অঙ্গীকার রাখে এবং নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে তাদের বসবাসের ব্যবস্থা করে তা হলে ফিরতে আগ্রহী রোহিঙ্গার সংখ্যা বাড়বে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালি-উর-রহমান বলেছেন, দ্বিপক্ষীয় চূড়ান্ত চুক্তি ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্টে ২০১৬ সালের পরে আসা রোহিঙ্গাদেও ফেরাতে ওই সময়সীমা নির্ধারিত হয়েছে। শুরুর দিকে দৈনিক ৩০০ করে সপ্তাহের ৫ দিনে ১৫’শ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয় মিয়ানমার। চুক্তিতে তিন মাসের মধ্যে পর্যালোচনা করে এই সংখ্যা বাড়ানোর অপশন বা সুযোগ রাখা হয়েছে। সরকারকে খেয়াল রাখতে হবে, রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমার যেনো কোন ছল-চাতুরির সুযোগ নিতে না পারে। কারণ তারা চাইবে না সব রোহিঙ্গা ফেরত যাক। আন্তর্জাতিক চাপ যতদিন অব্যাহত থাকবে ততদিনই মিয়ানমার নমনীয় থাকবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় রেখেই সরকার মিয়ানমারের সঙ্গে কাজ করছে। চুক্তি যেভাবে রয়েছে, তাতে ৭ লাখ রোহিঙ্গাকে দুই বছর কেন এক যুগেও ফেরত পাঠানো সম্বভ নয়।
বিদ্যমান চুক্তি ধরে প্রথম ৩ মাস বা ১৩ সপ্তাহে পাঠানো যাবে ১৯ হাজার ৫০০ জনকে (যদি মিয়ানমার রাজি থাকে)। সে হিসেবে ৫২ সপ্তাহ বা এক বছরে যাবে ৭৮ হাজার। দু’বছরে যেতে পারবে ১ লাখ ৫৬ হাজার। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার হিসাব মতে ’১৬ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ৭ লাখ ৪২ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বিদ্যমান চুক্তির পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলেও রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে কমপক্ষে ১১ বছর সময় লাগবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দৈনিক ৩ হাজার করে সপ্তাহে (৫ দিনে) ১৫ হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু মিয়ানমার তাতে রাজি হয়নি। বাংলাদেশের প্রস্তাবে মিয়ানমারের সায় পাওয়া গেলে সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গাকে ফেরাতে এক বছরের খানিক বেশি এবং দু’বছরের কম সময় লাগতো। কিন্তু মিয়ানমার বাংলাদেশের প্রস্তাবের এক দশমাংশে অর্থাৎ সপ্তাহে ১৫ হাজারের প্রস্তাবের বদলে সপ্তাহে ১৫’শ ফেরানোর প্রস্তাব করে। সম্পাদনা: ইকবাল খান