রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন অনিশ্চিত : আন্তর্জাতিক সংস্থাকে যুক্ত করার পরামর্শ
উম্মুল ওয়ারা সুইটি ও তরিকুল ইসলাম: মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী আজ মঙ্গলবার থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা পরিবারের তালিকা তৈরি ও যাচাইয়ের কাজ শেষ না হওয়ায় প্রাথমিক লক্ষ্য অনুযায়ী প্রত্যাবাসন শুরু হচ্ছে না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এইচ এম মাহমুদ আলীও এ ব্যাপারে রোববার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, সময় নির্ধারন করে প্রত্যাবাসন হবে না। শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম কক্সবাজারে বলেন, “কিছুটা সময় লাগবে। দুই দেশের প্রস্তুতিমূলক অনেক কাজ রয়েছে, যেগুলো মূল কাজ (প্রত্যাবাসন) শুরুর আগে আমাদের শুরু করতে হবে।’
বিবিসি, রয়টার্স ও গার্ডিয়ানসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র বলছে, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার কোনো ধরণের ব্যবস্থাই করে নি। আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের চুক্তি করেছে বাংলাদেশের সঙ্গে। তারা নামমাত্র কিছু রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে চায়। আন্তর্জাতিক চাপ কমে গেলে প্রত্যাবাসন বন্ধ হয়ে যাবে, এমনই কৌশল নিয়েছে দেশটি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, এর আগেও মিয়ানমার রোহিঙ্গা ইস্যুতে কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন, মিয়ানমারের এই কৌশল যেনো কোনো কাজে না লাগে, সে ব্যাপারে বিভিন্ন পর্যায়ে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখতে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নিজেও রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্বনেতাদের সমর্থন আদায়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে তিনি এই বিষয়ে ভাষণ দিয়েছেন। তার এই ভাষনের পর জাতিসংঘসহ অনেক দেশ বাংলাদেশের পক্ষে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। সরকার এব্যাপারে তৎপর।
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিরাপদে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সরকারকে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, এই চুক্তি যেনো সময়ক্ষেপনের অস্ত্র না হয়। মিয়ানমারের মধ্যে যৌথভাবে রোহিঙ্গা যাচাই বাছাইয়ের পাশাপাশি এই ইস্যুতে বিশ্বকে বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখতে হবে। কারণ মিয়ানমার এর আগেও আন্তর্জাতিকচাপে রোহিঙ্গা ইস্যুতে এ ধরণের চুক্তি করেছিলো। কিন্তু যখনই আন্তর্জাতিক চাপ শিথিল হয়েছে, তখন চুক্তিও ভেস্তে গেছে।
মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) অনুপ কুমার চাকমা বলেন, যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ হয়েছে এটা অবশ্যই ইতিবাচক। এখন খেয়াল রাখতে হবে টার্মস এন্ড রেফারেন্সগুলো ঠিকভাবে পালন করা হচ্ছে কিনা। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য বেশি জরুরি। অতীতেও মিয়ানমারের সঙ্গে এধরণের চুক্তি হয়েছিলো। সে অনুযায়ী রোহিঙ্গা ফেরত যায়নি। আন্তর্জাতিক চাপ অব্যহত রাখতে হবে।
মিয়ানমারে বাংলাদেশের আরেক সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর (অব.) ইমদাদুল ইসলাম বলেন, কমিটি গঠন একটা কূটনৈতিক সাফল্য। এখন আমাদের দিক থেকে চাপ থাকতে হবে যেনো সব রোহিঙ্গাকেই ফেরত পাঠানো যায়। ওয়াকিং গ্রুপকে চাপের মধ্যে রাখতে হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ও রোহিঙ্গা গবেষক অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, এখন প্রয়োজন আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রেখে দ্রুত প্রত্যাবাসন কাজ শেষ করা। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক সংস্থা গুলোকে যুক্ত করতে হবে। এই ওয়ার্কিং কমিটি যেনো কালক্ষেপনের কমিটি না হয়। এটাকে কার্যকর দেখতে হলে অবশ্যই কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে।