তারা অশুভ শক্তির কাছে বিক্রি হতে সব সময় প্রস্তুত থাকে
আসাদুজ্জামান সম্রাট: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বর্তমান উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা এগিয়ে নিতে সবাইকে নিয়ে চলার আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করে বলেছেন, একা নয়, সবাইকে নিয়েই চলতে চাই। সবাইকে নিয়েই চলছি। কারণ দেশটা সবার। গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্বে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। এ সময় কথিত সুশীলসমাজের কঠোর সমালোচনা করে সংসদ নেতা বলেছেন, দেশে কিছু মানুষ আছে, যারা চোখ থাকতেও অন্ধ, কান থাকতেও বধির। তাই দেশের এত উন্নয়ন ও অগ্রগতি তাদের চোখে পড়ে না। তারা অশুভ শক্তির কাছে বিক্রি হতে সব সময় প্রস্তুত থাকে। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাইকে নিয়েই চলতে চান তিনি। তবে হ্যাঁ, একজনকে কিন্তু হাল ধরতে হয়। দায়িত্ব নিয়ে সঠিকভাবে চালাতে হয়। যেমন গাড়িতে চালকের আসনে একজনই বসেন। যিনি সঠিকভাবে গাড়ি চালিয়ে সঠিক গন্তব্যে নিয়ে যান। যদিও কবি বলেছেন ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলোরে’, কিন্তু তিনি একলা চলতে চান না। এ প্রসঙ্গে সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির এমপিদের গঠনমূলক ভূমিকার প্রশংসা করেন সংসদ নেতা।
আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের গতিধারায় দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। সারাবিশ্ব এর স্বীকৃতি দিচ্ছে। কিন্তু এটাই বাংলাদেশের মানুষের দুর্ভাগ্য যে, এদেশের কিছু মানুষ এই উন্নয়ন চোখে দেখে না। একটা কথায় আছে, ‘হায় রে কপাল মন্দ, চোখ থাকিতে অন্ধ।’ যারা চোখ থাকতে অন্ধ, কান থাকতে বধির- তারা হাজার উন্নয়ন করলেও, হাজারবার বললেও দেখবে না, শুনবে না। এই না দেখাটাও তাদের অসুস্থতা। তাই তাদের ব্যাপারে কোনো কথা বলেও লাভ নেই।
সুশীলসমাজ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটা শ্রেণী আছে, যাদের ক্ষমতায় যাওয়ার ও একটি পতাকা পাওয়ার আকাঙ্খা আছে। কিন্তু তারা জনগণের কাছে যেতে পারেন না। ভোটের রাজনীতিতে তারা অচল। কিন্তু তারা জনগণের কাছে না গিয়ে, ক্ষমতায় যাওয়ার একটা বাঁকা পথ খোঁজেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরের পর এদেশে হত্যা-ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু হয়। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে কিছু লোক খুঁজে নেয়। এই লোকগুলো অবৈধভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার পথে ব্যবহৃত হয়। যেমন রাস্তার পাশে ডাস্টবিন থাকে- যেখানে লেখা থাকে ‘ইউজ মি’। তারাও কিন্তু বসে থাকে ‘আমাকে ব্যবহার করুন’- এমন মনোভাব নিয়ে। তারা বসে থাকেন, অবৈধভাবে ও অসাংবিধানিকভাবে কেউ যদি ক্ষমতায় যেতে পারেন- তাহলে তারাও একটি পতাকা পাবেন। ক্ষমতা পাবেন। তারা অশুভ শক্তির কাছে বিক্রি হতে সব সময় প্রস্তুত থাকে।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ‘সার্কাসের গাধার গল্প’ তুলে ধরে আরও বলেন, ওই গাধাটি অপেক্ষায় বসে ছিল কখন সার্কাসের মেয়েটি দড়ি ছিঁড়ে পড়ে যাবে, আর তার (গাধা) সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে হবে। এভাবে বসে থাকতে থাকতে অথর্ব হযে পড়লেও গাধাটি কিন্তু সুন্দরী মেয়েটির সঙ্গে বিয়ের আশা ছাড়েনি। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) কাউকে গাধা বলছেন না। তারা (সুশীলসমাজ) দেশের জ্ঞানী-গুনী, উচ্চশিক্ষিত মানুষ। অনেক খ্যাতিমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া করে এসেছেন। অনেকে বড় বড় গবেষণার কাজও করেন। তবে যখন তাদের এমন আচরণ দেখা যায়, আর তারা যখন ওই রকম আশা নিয়ে বসে থাকেন- তখন কিন্তু গাধার কথাটাই মনে পড়ে যায়।
এর আগে ফখরুল ইমামের লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশের মাুনষের মাথাপিছু আয় বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলের চেয়ে তিন গুণ বেড়েছে। বর্তমানে মাথাপিছু আয় বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৬১০ মার্কিন ডলার। আর ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৫৪৩ ডলার। সরকারের দক্ষ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় বর্তমানে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ২৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।
ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, তার সাম্প্রতিক ফ্রান্স সফরের ফলে বন্ধুপ্রতিম দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়েছে। সম্পাদনা : ইকবাল খান