নফসের প্রকার ও পরিচয় মুফতি আহমদ আবদুল্লাহ
নফস শব্দটি আরবি। শাব্দিক অর্থ আত্মা, মন, প্রবৃত্তি, প্রাণী, মানুষ, ব্যক্তি, স্বয়ং ইত্যাদি। সূফি ব্যক্তিরা নফস সম্পর্কে সুস্পষ্ট বর্ণনা দিয়েছেন। কোরআন ও হাদিসের বর্ণনার আলোকে তারা নফসের স্তরভিত্তিক বর্ণনা পেশ করেছেন। তাদের বর্ণনার সারমর্ম এই যে, মানুষের নফস মজ্জাগত ও স্বভাবগতভাবেই আম্মারাতুন বিছ-ছু অর্থাৎ পাপ কাজের দিকে আসক্ত হয়ে থাকে। কিন্তু ইমান, সৎকর্ম ও সাধনার বলে সে নফসে লাওয়ামাহ হয়ে যায় এবং মন্দকাজ ও ত্রুটির কারণে অনুতপ্ত হতে শুরু করে। কিন্তু মন্দকাজ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয় না। এরপর সৎকর্মে উন্নতি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করতে করতে যখন শরীয়তের আদেশ-নিষেধ প্রতিপালন তার মজ্জাগত ব্যাপার হয়ে যায় এবং শরীয়ত বিরোধী কাজের প্রতি স্বভাবগত ঘৃণা অনুভব করতে থাকে তখন এ নফসই ‘মুতমায়িন্নাহ’ উপাধি প্রাপ্ত হয়। নফসের এ স্তরভিত্তিক বর্ণনায় সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে, নফস মোট তিন প্রকার।
১. নফসে লাওয়ামাহ (প্রতারক আত্মা)। অর্থাৎ যে নফস মানুষকে কুপ্রবৃত্তি ও জৈবিক কামনার দিকে আকৃষ্ট করে। ২. নফসে লাওয়ামাহ (অনুশোচনাকারী আত্মা)। যে নফস অন্যায় করার পর মানুষের হৃদয়ে অনুশোচনার উদ্রেক করে। কোরআনে মহান রাব্বুল আলামিন নফসে লাওয়ামাহ- এর কথা উল্লেখপূর্বক কসম খেয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি শপথ করি কিয়ামাহ দিবসের আরও শপথ করি সেই মনের, যে নিজেকে ধিক্কার দেয়। ( সুরা কিয়ামাহ: ১-২)। তাফসিরে মারেফুল কোরআনে নফসে লাওয়ামাহ সম্পর্কে বলা হয়েছে, নফসে লাওয়ামাহ এমন একটি নফস, যে নিজের কাজকর্মের হিসাব নিয়ে নিজেকে ধিক্কার দেয়। অর্থাৎ কৃত গুণাহ অথবা ওয়াজিব কর্মে ত্রুটির কারণে নিজেকে ভৎসনা করে। সৎকর্ম সম্পর্কেও নিজেকে এই বলে তিরস্কার করে যে, আরও বেশী সৎকাজ সম্পাদন করে উচ্চমর্যাদা লাভ করলে না কেনো? হজরত হাসান বসরি (রাহ.) নফসে লাওয়ামাহ- এর তাফসির করেছেন, ‘নফসে মুমিনা’। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! মুমিন তো নিজেকে সর্বদা সর্বাবস্থায় ধিক্কায় দেয়। সৎকর্মসমূহেও সে আল্লাহর শানের মোকাবেলায় আপন কর্মে অভাব ও ত্রুটি অনুভব করে। কেননা আল্লাহর হক পুরোপুরি আদায় করা সাধ্যাতীত ব্যাপার। ফলে তার দৃষ্টিতে ত্রুটি থাকে এবং তার জন্যে নিজেকে ধিক্কার দেয়।
৩. নফসে মুতামায়িন্নাহ (প্রশান্ত আত্মা)। যে নফস সকল কালিমা থেকে মুক্ত এবং যাবতীয় মহৎ ভাবনায় পরিতৃপ্ত। প্রশান্ত এ আত্মা সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে প্রশান্ত আত্মা! তুমি তোমার পালনকর্তার কাছে ফিরে যাও সন্তুষ্ট ও সন্তুোষভাজন হয়ে। অতঃপর আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও। এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ করো।’ (সুরা ফজর: ২৭-৩০)। তাফসিরে মারেফুল কোরআনে নফসে মুতামায়িন্নাহ সম্পর্কে বলা হয়েছে, এ আত্মা আল্লাহর প্রতি তার সৃষ্টিগত ও আইনগত বিধি-বিধানে সন্তুষ্ট এবং আল্লাহও তার প্রতি সন্তুষ্ট। মহান রাব্বুল আলামিন এসব প্রশান্ত আত্মাকে সম্ভোধন করে বলেন, আমার বিশেষ বান্দাদের কাতারভুক্ত হয়ে যাও এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ করো।
লেখক: শিক্ষক, বাইতুন নূর মাদরাসা ঢাকা।