গর্ভ থেকেই সন্তানকে চারিত্রিক শিক্ষা দেবেন মা! গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির
শিশুর চরিত্র গঠনে মায়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। পারিবারিক জীবনে পিতা-মাতার দায়িত্ব দ্বৈত হলেও মায়ের ভূমিকা বিশেষভাবে স্বীকৃত। সুখী, সমৃদ্ধশালী আদর্শ পরিবার গড়ে তুলতে আল্লাহ তায়ালা ঘোষনা করেন, “হে মুমিনগন! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবার পরিজনদের সেই (দোজখের) আগুন থেকে রক্ষা কর” (আল- কোরআন) এ সম্পর্কে মহানবী সা. সর্তকবাণী উচ্চারণ করে বলেন, “সাবধান! তোমাদের অধীনস্তদের রক্ষণাবেক্ষণে দায়িত্ব তোমাদের উপর এবং তাদের উপর প্রতিষ্ঠিত দায়িত্ব কে তুমি যেভাবে ব্যবহার করেছ সে সম্পর্কে তোমাকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে”। এ দায়িত্ব পালনের যে নীতিমালা তা হলো ইসলামী বিধান মতে। ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় পারিবারিক দায়-দায়িত্ব পিতা-মাতা উভয়েরই। তবে সন্তান লালন পালন ও শিক্ষা-দীক্ষার ব্যাপারে মায়ের প্রভাব ও ভূূমিকা বেশী । কারণ, সন্তানের উপর মায়ের প্রভাব অনস্বীকার্য। বাস্তব জীবনে অসংখ্য দৃষ্টান্ত দিতে পারি। হযরত আবদুল কাদির জিলানী (রহ) এর কথা বলতে পারি। হযরত আবদুল কাদির জিলানী (রহঃ) যখন মাতৃগর্ভে ছিলেন তখন তাঁর মাতা নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত সহ ইসলামের বিধি-বিধান মতে ইবাদত বন্দেগীর মধ্যে মশগুল থাকতেন। যার ফলশ্রুতিতে আমরা হযরত আবদুল কাদির জিলানী (রহঃ) ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর আঠারো পারা কোরআনে হাফেজ হয়ে জন্ম নেওয়ার কথা জানি। পক্ষান্তরে, বিমর্ষ, কর্কশ, কুচিন্তামগ্ন দেহ হতে জন্মপ্রাপ্ত সন্তান হয় ঐ ছাঁচেরই অর্থাৎ বিবেক বুদ্ধিহীন, চরিত্রহীন, পিতা-মাতার অবাধ্য বখাটে, স্বার্থপর ও পশুসুলভ স্বভাবের। সন্তান জন্মের সংকটময় সময় হতে সন্তানের স্তন্যপান কাল পর্যন্ত সময়টা একজন মায়ের জন্য এক বিশেষ অধ্যায়। এসময় একজন মাকে শিশুর খাওয়া-দাওয়া, সেবা-শুশ্রুষা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সুবিধা-অসুবিধা ইত্যদির প্রতি সদা সতর্ক থাকতে হয়। এসময় মাকে নিজের সুখ-শান্তি, আহার, নিদ্রা ইত্যাদি বিসর্জন দিয়ে সন্তানের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করতে হয়। এখানে একটা কথা বলা প্রয়োজন- অজ্ঞতার কারণে আমাদের সমাজের মায়েরা “শালদুধ” (ঘন ও হলুদ রং এর দুধ) শিশুর জন্য ক্ষতিকর মনে করেন যা কিনা শিশুর দৈহিক গঠন, শক্তি বৃদ্ধি ও রোগ প্রতিষেধকের জন্য অপরিহার্য্য। সাধারণ দুধ অপেক্ষা “শালদুধ” রোগ প্রতিরোধক উপাদান অনেক বেশি থাকে।
“শালদুধ” হচ্ছে শিশুর প্রথম টিকা। মায়ের দুধে বিভিন্ন রকম অসুখ-বিসুখের হাত থেকে শিশু রক্ষা পায়, ফলে সে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়। এছাড়া মায়ের বুকের শিশু ও মায়ের মধ্যে ভালবাসার সেতু বন্ধন সৃষ্টি করে। পক্ষান্তরে বোতলের দুধ খেলে শিশু মায়ের স্পর্শ পায় না। শিশু ও মায়ের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি হয় ও ¯েœহ ভালবাসা থেকে কিছুটা হলেও বঞ্চিত হয়। আর এ ধরনের শিশুরা পরবর্তীতে প্রায় দেখা যায় নিষ্ঠুর ও স্বার্থপর হয়। শিশুকে বুকের দুধ পানের বিষয়ে আল্লাহ পাক ঘোষনা করেন, “মায়েরা তাদের সন্তানকে পূর্ন দু’ বছর দুধ পান করাবে” (সুরা-বাকারা ২৩৩)।
প্রকৃতিগত ভাবে মায়ের দুধে যে রোগ প্রতিরোধক উপাদান বিদ্যমান এবং শশুদের প্রধান খাদ্য তা বর্তমান বৈজ্ঞানিক ও আধুনিক যুগে প্রতিষ্ঠিত সত্য বলে প্রমাণিত। মায়ের স্তনে প্রকৃতিগত ভাবে যে দুধ প্রস্তুত হয় তা মহান আল্লাহ পাকেরই দান, যা দ্বারা শিশুর দৈহিক গঠনের সাথে সাথে মানসিক ও চারিত্রিক গঠনও গড়ে ওঠে। কাজেই একজন মাকে গর্ভাবস্থায় হালাল-হারামের দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। যেন শিশুর দৈহিক মানসিক ও চারিত্রিক গঠনে হারাম খাদ্যের কোনরূপ প্রভাব পড়তে না পারে। সন্তানের বয়স যখন দু’ বছর পূর্ন হবে তখন থেকেই সন্তানকে নির্মল চরিত্রে গড়ে তোলার সময়। এ সময় শিশু মায়ের একান্ত সান্নিধ্যে থাকে। শিশুমুখের প্রথম বুলি, ভাবের আদা-প্রদান, মান-অভিমান এবং মায়ের সকল কিছু অনুকরন করে থাকে । মানুষের সহজাত প্রবণতা হল মানুষ অনুকরণ প্রিয়, আর এ ক্ষেত্রে বড়দের চেয়ে শিশুরা অগ্রগামী অর্থাৎ শিশুরা অতি সহজেই যে কোনো কিছু অনুকরণ করে থাকে।মজার ব্যাপার, শিশুরা কিন্তু এ সময় অপরের সং¯্রবে যেতে দ্বিধাবোধ করে। কাজেই এ সময় একজন মা যত সহজে তার শিশুকে শিক্ষাদান করতে পারে অন্য কেউ তা পারে না।
লেখক : অনুবাদক ও প্রাবন্ধিক।