যে চরিত্র বান্দাকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায় নাজমুল ইসলাম কাসিমি
দোযখকে আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিন অহঙ্কারীর মাধ্যমে পূর্ণ করে দেবেন। কারণ, অহংকারি ব্যক্তি যে নিজেকে অন্যের চেয়ে বড় মনে করে এবং অন্যদের ছোট মনে করে। এই অহংকার ও গর্ব এক মুহূর্তের জন্যও আল্লাহ তাআলা একটুকও পছন্দ করেন না। এই অহংকারী মনোভাব সর্বপ্রথম দেখিয়েছিলো শয়তান। আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, আর আমি তোমাদের সৃষ্টি করলাম, এরপর আকার-অবয়ব তৈরি করেছি। অতঃপর আমি ফেরেশতাদের বললাম- আদমকে সেজদা কর; তখন সবাই সেজদা করল। কিন্তু ইবলিস সেজদাকারীদের মধ্যে ছিল না। আল্লাহ বললেন: আমি যখন তোকে সেজদা করার আদেশ দিলাম তখন কিসে তোকে সেজদা করতে বাধা দিল? সে বলল: আমি তার চেয়ে উত্তম। আমাকে বানিয়েছেন আগুন দিয়ে; তাকে বানিয়েছেন মাটি দিয়ে। (সুরা আরাফ, আয়াত-১১-১২)
হাদিস শরিফে এসেছে, আল্লাহপাক বলেছেন, বড়ত্ব আমার চাদর। যে আমার চাদর নিয়ে টানাহেচড়া করবে, তাকে আমি আগুনে দেব। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং-৭৩৮২; মুসলিম শরিফ, হাদিস নং-২৬২০; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-৪১৭৪)। আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি অহংকারবশতঃ কাপড় ঝুলিয়ে হাঁটবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার দিকে তাকাবেন না। আবু বকর (রা.) বললেন, আমার কাপড়ের একটা অংশ ঝুলে পড়ে যায়; আমি বারবার সেটাকে টেনে নেই। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন: তুমি তো অহংকারবশতঃ সেটা কর না (সহিহ বুখারি, হাদিস নং-৩৪৬৫) হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) অথবা আবুল কাসেম বলেছেন, একদা এক ব্যক্তি হুল্লা পরে, আত্মম্ভরিতা নিয়ে, মাথা আঁচড়িয়ে হাঁটছিল। এমতাবস্থায় আল্লাহ তাকে সহ ভূমি ধ্বস করে দিলেন এবং এভাবে কিয়ামত পর্যন্ত সে নীচের দিকে যেতে থাকবে। (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম )। অহংকার হলো, দোযখে পৌঁছনোর আমল। আল্লাহ তাআলা স্বীয় রহমতে এ গুনাহ থেকে রক্ষা করুন। এটি মারাত্মক গুনাহ। উম্মুল আমরাজ বা পাপের মূল। একবার যখন মানুষের অন্তরে অহংকার এসে যায় তখন সে নিজেকে বড় ভাবতে থাকে। আর অন্যকে তুচ্ছজ্ঞান করে।
অহংকার কখনও ঈমানের সঙ্গে একত্র হতে পারে না। যখন মানুষের মনে অহংকার এসে যায় আল্লাহ হেফাজত করুন কোনো কোনো সময় সংকটে পড়ে যায়। অহংকারই তো শয়তান ইবলিসকে ডুবিয়েছে। তাকে বলা হয়েছে সেজদা কর। মাথায় অহংকার এসে গেছে- আমি আগুনের তৈরি আর সে মাটির! অন্তরে তার প্রতি ঘৃণা আর নিজের বড়ত্ব এসে গেছে; ফলে সমস্ত জীবনের জন্য দরবারে ইলাহি থেকে বিতাড়িত ও অভিশপ্ত হয়ে গেছে। এটি অহংকারের ভয়ানক পরিণতি। এত্থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিৎ। আরবি ভাষায় একটি বিষয়কর বিজ্ঞবচন আছে। যার অর্থ হলো, অহংকারির উপমা ওই ব্যক্তির মতো যে, পর্বত চূড়ায় দাড়িয়ে আছে। উঁচুতে হওয়ার কারণে সে অন্যদের ছোট ভাবে। অন্যরাও তাকে ছোট মনে করে। যত মানুষকে হেয় দৃষ্টিতে দেখবে, তত কবিরা গুনাহ তার আমল নামায় বৃদ্ধি পেতে থাকবে। অহংকারি যখন অন্যদের সঙ্গে কথা বলে, কর্কষভাবে কথা বলে। যার মাধ্যমে অন্যের হৃদয় ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। আর কোনো মুসলমানের হৃদয় ভাঙ্গাও গুনাহ। আল্লাহ তাআলা এ রোগ থেকে আমাদের হেফাজত করুন। এ রোগ মানুষের অন্তরে এভাবে প্রবেশ করে যে, অনেক সময় সে জানতেও পারে না। সে মনে করে সুস্থ আছে। তবে বাস্তবে সে অহংকারের রোগে আক্রান্ত। যা তাকে দোযখের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃত ঈমান অহংকারের সাথে একত্র হতে পারে না।