বিনয় ভূষণ জয়ধর
সনাতন ধর্ম বিশ্বাস করে, ‘মানুষের দেহ পাঁচটি উপাদান দিয়ে তৈরি’। যথা: আকাশ, বায়ু, অগ্নি, জল ও মাটি। তাই মৃত্যুর পর এই দেহ আগুনে দাহ করা হয় অথবা মাটি দেওয়া হয়। অর্থাৎ যে উপাদান দিয়ে এই দেহ তৈরি, মৃত্যুর পর আবার সেই একই উপাদানে মিশে যায়।
তেমনি প্রতিমার ক্ষেত্রেও তাই, মাটি দিয়ে তৈরি। মাটির প্রাণহীন মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করলে সেটি প্রতিমা হয়। আর পূজা শেষে দেবীকে বিদায়ের পর সেই প্রতিমাটি আবার প্রাণহীন মূর্তি যায়। আর তাই তাকে আবার পঞ্চতত্ত্বের জলেই বিসর্জন দেওয়া হয়। ঈশ্বর সর্বত্রই বিরাজিত। প্রতিটি বস্তু, প্রতিটি প্রাণীর মধ্যই তিনি আছেন। তবে, পঞ্চ উপাদানে গড়া এই মানব দেহের প্রতীকী হিসেবেই আমরা পূজার সময় প্রতিমা তৈরি করি মাটি দিয়ে। পরবর্তীতে সেই মাটির প্রতিমায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে তাকে ঈশ্বর জ্ঞানে পূজা করি।
এই প্রতিমা পূজার সর্বশেষ ধাপ হচ্ছে বিসর্জন। জলের মাধ্যমেই যেন মাটির প্রতিমা পুনরায় প্রকৃতিতে মিশে যায়, সেই জন্যই আমরা গঙ্গার জলে প্রতিমা বিসর্জন দেই। আমাদের হৃদয়ে যে নিরাকার ঈশ্বর রয়েছে, উপসনার নিমিত্তে মাটির প্রতিমা তৈরি করে তাকে ‘সাকার রূপ’ দেওয়া হয়। পূজা শেষে পুনরায় সেই ‘সাকার রূপ’কে বিসর্জন দিয়ে নিরাকার ঈশ্বরকে হৃদয়ে স্থান দেওয়া হয়। সেই কারণেই পূজার সময় যখন প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় তখন মায়ের প্রতি আমাদের প্রার্থনা থাকে, ‘মা, তুমি আবার এসো আমাদের মাঝে। একটি বছর তুমি থাকবে আমাদের হৃদয়ে। আবার, বছর পরে তোমার প্রতিমা গড়ে আমরা সাড়ম্বরে তোমার পূজা করব।’
যে জন্ম নিয়েছে, তার মৃত্যু অনিবার্য? এটাই প্রকৃতির শাশ্বত নিয়ম? ঠিক তেমনি যাকে আবাহন করা হয়, তার বিসর্জনও অনিবার্য