সনৎ কুমার ঘোষ
ভালবাসা হলো সেই ছায়া, যা জীবনের চূড়ান্ত রোদ থেকে আমাদের বাঁচায়। শান্তি দেয়, আরাম দেয়। শুধু তাই নয়, হাজারো ঝড়-ঝাপ্টার মাঝেও এক টুকরো নিরাপদ আস্তানার সন্ধান তো সেই ভালবাসাই করে দেই। তবু হিন্দু বিবাহের প্রধান শর্ত হিসেবে ভালবাসার পরিবর্তে গুরুত্ব পয়েছে কোষ্ঠী মেলানোর মতো একটি প্রথা। কিন্তু কেন এমনটা হয়েছে? এর পিছনে আসল কারণটাই বা কী? জন্মের সময় অনুসারে আমরা সকলেই কোনো না কোনো রাশীর জাতক-জাতিকা। শুধু তাই নয় জ্যোতিষ বিজ্ঞান অনুসারে আমাদের জীবনের ভাল-মন্দ সবই নির্ভর করে আমাদের রাশীর উপর। আর বিবাহ যেহেতু জন্ম এবং মৃত্যুর মাঝে জীবনের সব থেকে বড় ‘ইভেন্ট’, তাই এটি কী করে বাদ যায় রাশি চক্রের প্রভাব থেকে! তাই তো বিদ্যানদের মতে যদি বিবাহ জীবন সুখের চান, তাহলে ভালবাসা আছে কি নেই, তা বিচার না করে প্রথমেই পাত্র-পাত্রীর কোষ্ঠী মিলছে কিনা তা দেখে নেওয়া উচিত। যদি মেলে তবেই বিয়ের বিষয় ভাবনা-চিন্তা শুরু করা উচিত, নচেৎ নয়! আপাত দৃষ্টিতে এমন কথা শুনে রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু এই বক্তব্য যে একেবারেই ফেলনা নয়, তা বলাই বাহুল্য়। কারণ বিয়ের আগে কোষ্ঠী মিলিয়ে নেওয়ার প্রথা আজকের নয়, বহু যুগ আগে থেকেই চলে আসছে এবং এর থেকে যে সুফল পাওয়া যায়নি, এমনও নয়। আপনার আশেপাশে একটু নজর ফিরিয়ে দেখুন, এমন অনেক স্বামী-স্ত্রীর খোঁজ পাবেন যাদের মধ্যে আপাত দৃষ্টিতে কোনো সমস্যা না থাকলেও তাদের বৈবাহিক জীবন একেবারেই সুখের স্বাদ পায় না। কারণ সেই একই। পাত্র-পাত্রীর মধ্য়ে গ্রহ-নক্ষত্রের মিলন না হলে হাজারো সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। তাই তো কোনো গ্রহের সঙ্গে কোনো নক্ষত্রের মিলন হয়, তা দেখে নেওয়াটা একান্ত প্রয়োজন।
এক্ষেত্রে সাধারণত ৩৬টি গুণের মধ্যে পাত্র-পাত্রীর কতগুলি গুণ মিলছে, তা দেখা হয়। প্রসঙ্গত, যত বেশি সংখ্যক গুণের মিল হবে, বৈবাহিক জীবন তত ভাল হবে বলে মনে করে থাকেন জ্যোতিষ বিশেষজ্ঞরা। সান সাইন এবং বিবাহ: জ্যোতিষ বিজ্ঞানে মোট ১২টি রাশার উল্লেখ পাওয়া যায়। যাদের মোট ৪টি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। যেমন- ১. আগুন: মেষরাশি, সিংহরাশি এবং ধনুরাশি। ২. জল: কর্কট, বৃশ্চিকরাশি এবং মীনরাশি। ৩. পৃথিবী: বৃষরাশি, কন্যারাশি, মকররাশি। ৪. বায়ু: মিথুনরাশি, তুলারাশি, কুম্ভরাশি। শঁহফষর সধঃপযরহম পুরান অনুসারে একই বিভাগের রাশির জাতক-জাতিকার একে অপরের সঙ্গে খুব সুখে থাকে। তাই তো তাদের বৈবাহিক জীবন খুব সুন্দর হয়। কিন্তু কেউ যদি আলাদা কোনো বিভাগের রাশির জাতক-জাতিকার সঙ্গে ঘর বাঁধেন তাহলেই বিপদ। সেই কারণেই তো জলকে আগুন অথবা বায়ুর সংস্পর্শে আনা চলবে না। যদিও বিষয়টি এতটাও সহজ নয়। এক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞ পাত্র-পাত্রী কোনো বিভাগে রয়েছে তা বিবেচনা করার পাশাপাশি আরও ৭৮টি আলাদা আলাদা বিষয় বিশ্লেষণ করে তবেই চূরান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।