
ভগবৎ গীতার শিক্ষা পূজন চন্দ্র বিশ্বাস
হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, ভগবান শ্রী কৃষ্ণ, ভগবান বিষ্ণুর অবতার এবং তার ধর্মোপদেশ স্বয়ং ঈশ্বরের বাণী ছাড়া আর কিছুই নয়। ভগবৎ গীতা থেকে যে বিষয়গুলি আপনি শিখবেন তার ওপর আপনাকে গুরুত্ব দিয়ে মনোযোগ দিতে হবে। যা ঘটছে তা অবশ্যম্ভাবী এবং অনিবার্য। আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে যে যাই ঘটছে তা মানুষের মঙ্গলের জন্যই ঘটছে। এর মধ্যে হস্তক্ষেপ করার বা একে থামানোর কোনো অধিকার আপনার নেই। ভগবৎ গীতা আপনাকে শুধু ফলের চিন্তা না করে কর্ম করে যাওয়ার অনুমতি দেয়। কর্মফলের ওপর আপনার কোনো দাবি নেই। আত্মা অমর, একে ধ্বংস করা যায় না। একজন ব্যক্তির মৃত্যুর পর আত্মা কেবল শরীর পরিবর্তন করে। এটি কখনোই ভিজে যেতে পারে না বা আগুনে পুরে যেতে পারে না।
খালি হাতেই আপনি জন্মে ছিলেন এবং সেই অবস্থাতেই আপনি এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবেন। মৃত্যুর পর আপনি আপনার সাথে কোনো পার্থিব সম্পদ বয়ে নিয়ে পারবেন না।
লোভ, লালসা এবং ক্রোধ বিষ-তুল্য এবং মানুষের প্রকৃতি ও চরিত্রকে নষ্ট করে। একটি শান্তিপূর্ণ জীবন যার পথ আপনাকে মহিমান্বিত করতে পারে তার জন্যে গীতা আপনাকে এই তিনটি অশুভ রিপু দ্বারা ভুগতে দেয় না। আমাদের ভগবৎ গীতা থেকে যে বিষয়গুলি শিখতে হবে, সেগুলির মধ্যে এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি সন্দেহ পরিত্রাণ না করলে, মানসিক শান্তি পাওয়ার কথা আশা করতেই পারবেন না। প্রতিটি ব্যক্তি নিজের ভেতর থেকেই অনুপ্রেরণা নিয়ে থাকে, কারণ সে নিজেই নিজের পরম বন্ধু বা শত্রু। সে নিজেই নিজের চিন্তা ও ধারণা থেকে বহুল পরিমাণে প্রভাবিত হয়ে থাকে ও সেই অনুযায়ী কর্ম করে থাকে। আপনার কর্ম ঈশ্বর দ্বারা যথোপযুক্ত বিচার করা হবে। মৃত্যুর পর আপনার কর্মের জন্য আপনাকে দ- বা পুরস্কার পেতে হবে। বিচার কেবলমাত্র মৃত্যুর পরই সম্পন্ন হবে এবং এটিই মৃত ব্যক্তির শেষ পরিণতি নির্ধারণ করবে।
অন্য কারোর কাছ থেকে সম্মান পেতে হলে, আপনাকে আগে তাদেরকে সম্মান দিতে হবে। আপনি নিজে যাকে সম্মান করেন না তার কাছ থেকে আপনি সম্মান পাওয়ার আশা করতে পারেন না। জীবনের সম্পদ বা অসুবিধা কিছুই আপনি নিজে বেছে নিতে পারেন না। জীবন আপনাকে যা দেবে সেটাই আপনার মেনে নেওয়া প্রয়োজন। এই বিষয়গুলি আপনার পূর্বকৃত-কর্মফলের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।
একই জায়গায় স্থবির হয়ে থাকা মনুষ্যজাতির উদ্দেশ্য নয়। কর্ম দ্বারা তাদেরকে অগ্রসর ও বিকশিত হতে হবে। মানুষের কর্মের ওপর ভিত্তি করে ঈশ্বর তাদের পথ নির্ধারণ করবেন।
জগত ও সৃষ্টি প্রকৃতিগত ভাবে ক্ষয়িষ্ণু, তার ফলে এক না একদিন উভয়েরই অন্ত আসবে। পূর্ব নির্ধারিত দিন বা সময়ে পরিসমাপ্তির সাথে মিলিত হওয়া থেকে আপনি তাদের আটকাতে পারবেন না। যেহেতু, ভগবান কৃষ্ণ জগত ও সৃষ্টির পালক, আপনাকে শুধু আপনার কর্ম ও ক্রিয়া তাকে উৎসর্গ করতে হবে। আপনার জীবনের সাফল্য ও ব্যর্থতার সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে দিন। জগত-সংসার ভগবান শ্রী কৃষ্ণেরই সৃষ্টি এবং সবই তার ইচ্ছাশক্তিতে ঘটছে। একজন মানুষ হিসাবে, এর বাইরে কিছু নিয়ে চিন্তা করার অধিকার আপনার নেই। ধন-সম্পদ ও কামনার দাস বা হাতের পুতুল হয়ে পড়লে, তা আপনার প্রকৃতি ও চরিত্রে একটা নিশ্চিত অধঃপতন নিয়ে আসতে পারে। প্রকৃতপক্ষে এর ফল, চরম ব্যর্থতা হতে পারে।
