গোপালগঞ্জে খ্রিস্টানদের উপর হামলা, বিভিন্ন সংগঠনের নিন্দা
খ্রিস্টীয় দর্পণ ডেস্ক : গোপালগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত সাধু মধুরানাথ এজি চার্চের খ্রিস্টভক্তদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।
২০ জানুয়ারী, শনিবার সকালে গোপালগঞ্জ সেবক পাগলা সমিতির মহা সম্মেলনে আগত সেবকদের জন্য শহরস্থ সাধা মথুরানাথ এজি চার্চের মিশনের পুকুরে মাছ ধরা হচ্ছিলো। এই সময় স্থানীয় হিটু গাজী, শিরু শেখ সহ কয়েকজন পুকুরে মাছ ধরতে নিষেধ করেন। তারা দাবী করেন পুকুর তাদের। এই সময় দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। ঘটনার জেরে দুই দফায় খ্রিস্টানদের উপর হামলা হয় বলে জানান ভুক্তভোগীরা। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে স্থানীয় গোপালগঞ্জ খ্রিস্টান ফেলোশিপের সভাপতি শমুয়েল বালা বিডি খ্রিস্টান নিউজকে বলেন, ‘প্রথমে সকালে মাছ ধরার সময় হিটু ও শিরু মাছ ধরতে নিষেধ করেন। মাছ ধরা বন্ধ না করলে স্থানীয় চার্চের পালক সহ আরো কয়েকজনকে চড় থাপ্পর দেয় এবং মিঠুন বালাকে মারাত্মকভাবে জখম করে, তার কানে দুটি শেলাই দিতে হয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে খ্রিস্টানরা মানব বন্ধনের আয়োজন করে। এই সময় ক্ষুদ্ধ হয়ে চার্চ প্রাঙ্গণে চলতে থাকা সেবক সমিতির উপাসনায় আবারো হামলা চালায় হামলাকারীরা’।
থানায় মামলা করতে গেলে মামলা নেয়নি পুলিশ। এরপর ভুক্তভোগীরা জেলা প্রশাসকের নিকট যান। দুপুরে জেলা প্রশাসক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং সমবেদনা জানান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় সাংসদ শেখ ফজলুল করিম স্থানীয় জেলা প্রশাসক ও এসপিকে ফোন করেন। শমুয়েল বালা জানান, সন্ধ্যা ছয়টা থেকে হামলাকারী ও আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়ে জেলা প্রশাসক তার কনফারেন্স রুমে বৈঠকে বসেন। তিন ঘণ্টা ধরে চলে সভা। এতে উভয়পক্ষের কথা শুনে জেলা প্রশাসক বলেন, পুকুরের জমি গির্জার। তাই হামলা করা ঠিক হয়নি। অন্যায় হয়েছে। তিনি হামলাকারীদের কঠোরভাবে তিরস্কার করেন। হামলাকারীরা নিজেদের ভুল স্বীকার করেন। সাথে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দরাও। এদিকে ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে খ্রিস্টান এসোসিয়েশন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খ্রিস্টান এসোসিয়েশন সহ অন্যান্য খ্রিস্টান সংগঠনগুলো।
২১ জানুয়ারী, গোপালগঞ্জের সেন্ট মথুরানাথ এজি চার্চের পালক অনুকূল বিশ্বাস সহ ০৩ জনের ওপর হামলার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ খ্রিস্টান এসোসিয়েশন (বিসিএ)। এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও এবং মহাসচিব হেমন্ত আই. কোড়াইয়া এক যৌথ বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন। নেতৃবৃন্দ এ হামলার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা। হামলাকারী মহলটি চার্চ সংলগ্ন চার্চের ৩৮ শতাংশের পুকুরটি দখল করার জন্য দীর্ঘদিন যাবত অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে। আমাদের জানামতে এ বিষয়ে চার্চ কর্তৃপক্ষ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকেও সহযোগিতা চেয়েছেন। বিসিএ’র নেতাদ্বয় আরো বলেন, আধুনিক গোপালগঞ্জ গড়ার অন্যতম রূপকার সেন্ট মথুরানাথের অবদান সর্বজন স্বীকৃত। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেন্ট মথুরানাথ প্রতিষ্ঠিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তারই নামে প্রতিষ্ঠিত চার্চ এবং চার্চের পুকুর আজ দখলের চেষ্টা করা হচ্ছে, যা আমাদেরকে ব্যাথিত ও উদ্বিগ্ন করেছে। আমরা এ সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান প্রত্যাশা করছি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছি। সূত্র : বিডি খ্রিস্টান নিউজ