খ্রিস্টীয় বাণী প্রচারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম
সুমন কোড়াইয়া : টনি পালমা একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে ড্রাইভার পদে চাকরী করেন। তার বেশির ভাগ সময় ডিউটি সকালে এবং সন্ধ্যায়। বাকি সময়টা অবসরে কাটে তার। কীভাবে সময় কাটান? উত্তর দেন: ফেসবুক দেখি। এমনি বসে থাকতে ভালো লাগে না। ফেসবুক আসার আগে টনি ইন্টারনেট কি তা জানতেন না এবং এখনো ভালোভাবে জানেন না। দেশের অনেক মানুষ টনির মত ইন্টারনেট কি তা জানেন না কিন্তু ফেসবুক কি তা বলতে পারবেন। ফেসবুকের মত বাইদো, টুইটার, হোয়াটসআপ, গুগল প্লাস, উইচেট, ইন্সটাগ্রাম সহ প্রায় শ খানেক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্লাটফরম রয়েছে। আর বর্তমানে বিশ্বব্যাপী তিন শত কোটির বেশি মানুষ কোন না কোন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছেন বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী ৩০০ কোটি ২৮ লাখ মানুষ নিয়মিতভাবে সামাজিক যোগাযোগ ব্যবহার করছেন। যদি বিশ্বের জনসংখ্যা ৭৫২ কোটি ৪০ লাখ ধরা হয়, তবে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীর এ সংখ্যা অবাক করার বিষয়। শুধু তাই নয়, এটি বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ে কাজ করা ‘হটসুইট’ এবং ‘উই আর সোশ্যাল’ নামে দুটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের যৌথ এ জরিপের তথ্য প্রকাশ করেছে দ্য নেক্সট ওয়েব।
বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২ কোটি ৯০ লাখ। ‘হটসুইট’ এবং ‘উই আর সোশ্যাল’ এর জরিপে আরো দেখা গেছে, ফেসবুক ব্যবহারের দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষ শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়। বাংলাদেশে ২ কোটি ৯০ লাখের বেশি সক্রিয়ভাবে ফেসবুক ব্যবহার করছেন। অন্যদিকে দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারী গত সেপ্টেম্বরে ছিল ৭ কোটি ৩৩ লাখ, যার সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মধ্যে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে ফেসবুক। সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে ‘রাজা’ হিসেবে খ্যাত ফেসবুক। প্রতিদিন ফেসবুকে প্রবেশ করে ১ শত ৩৭ কোটি মানুষ। ১ শত ১৫ কোটি মানুষ মোবাইলের মাধ্যমে ফেসবুক ব্যবহার করে থাকেন। প্রতিদিন ৩০ কোটির বেশি ফটো আপলোড হয় ফেসবুকে এবং গড়ে ফেসবুকে সময় কাটান ২০ মিনিট করে। অন্যদিকে প্রতি ৩০ সেকেন্ডে ৫ লাখ ১০ হাজার কমেন্ট, ২ লাখ ৯৩ হাজার স্টেটাস আপলোপ হয় ফেসবুকে।
এত বিপুল সংখ্যক ফেসবুক ব্যবহারকারীর মধ্যে খ্রিস্টীয় বাণী প্রচার করার এক দারুণ সুযোগ। পুণ্য পিতা পোপ ফ্রান্সিস নিজেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বেছে নিয়েছেন খ্রিস্টীয় বাণী প্রচারের মাধ্যম হিসেবে। আধুনিকমনা পোপ ফ্রান্সিস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক জনপ্রিয়। টুইটারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ফলোয়ার হচ্ছে পোপ ফ্রান্সিসের। তাঁর ফলোয়ার বা অনুসারীর সংখ্যা ৪০ মিলিয়ন বা ৪ কোটির বেশি। তাঁর চেয়ে দুই লক্ষ বেশি ফলোয়ার নিয়ে এগিয়ে আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। পোপ ফ্রান্সিস ইন্সট্রগ্রামেও রয়েছেন। এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটিতে তিনি একাউন্ট খোলার ১২ ঘন্টার মধ্যে তাঁর ফলোয়ার হয়ে যায় ১০ লাখের বেশি। তার টুইটগুলো হয়ে থাকে মন্ডলীর শিক্ষা, ন্যায্যতা ও মনবাধিকার সংক্রান্ত।
খ্রিস্টীয় শিক্ষা, মন্ডলীর চিন্তা চেতনা ছবি সহ ফেসবুকে বা অন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের প্রোফাইলে বা ফেনপেজে বা গ্রুপে পোষ্ট করার মাধ্যমে মুহূর্তে পৌঁছে যেতে পারে লক্ষ কোটি মানুষের কাছে।
ফেসবুকের মাধ্যমে মঙ্গলসমাচার প্রচারের কৌশল:
ছোট গল্প লিখে: ফেসবুকে বড় লেখা মানুষ পড়তে চান না। তাই যথা সম্ভব ছোট শিক্ষনীয় গল্প, যেখানে মন্ডলীর শিক্ষা থাকতে পারে সেভাবে নিজের ফেসবুক পেজে ঈশ্বরের বাণী প্রচারের সুযোগ রয়েছে। আপনার লেখাটি পাঠকদের ভালো লাগলে তারা সেখানে কমেন্ট করবেন, লাইক দিবেন এবং শেয়ারও করবেন যেন অন্য মানুষ সেটা পড়তে পারেন। ফেসবুকে অন্যের কনটেন্ট শেয়ার করার প্রবণতা দেখে বুঝা যায় ভাল জিনিসের বিজ্ঞাপন লাগে না। অন্যরাই বিজ্ঞাপন দিয়ে দেন। সাধুসাধ্বীর জীবনী: সংক্ষিপ্তাকারে বিভিন্ন সাধু সাধ্বীর জীবনী বা ত্যাগ স্বীকারের মাধ্যমে মন্ডলীতে আদর্শ রেখে গেছেন সেসব ব্যক্তির তাঁর বিষয়ে লিখতে পারেন ফেসবুকে। সেখানে যাকে নিয়ে লিখছে, তাঁর ছবি দিলে আপনার পোষ্টটি আরো বেশি আকর্ষণীয় হবে। পৌঁছাবে তুলনামূলক বেশি মানুষের কাছে। আপনার পোষ্টটি ছবি সহ সময় নিয়ে পড়বেন।
কমেন্ট ডিলেট: মনে করুন, আপনি একটি পোষ্ট দিলেন আপনার প্রোফাইলে। সেটা অনেকের পছন্দ নাও হতে পারে। সেখানে আপনাকে আক্রমণ করে কেউ কমেন্ট (মন্তব্য) করলেন বা নেতিবাচক মন্তব্য করলেন, সেটা আপনি ডিলেট করে দিতে পারেন। এতে অন্য মানুষ নেতিবাচক মন্তব্য দেখতে পারবেন না।
ভিডিও: ফেসবুক এখন হয়ে গেছে মিনি টিভি। মানুষ যতটা না সময় টিভিতে কাটায়, ততটা বেশি সময় মানুষ তুলনামূলক ফেসবুকে বা ইউটিউবে কাটায়। তাই ইউটিউব থেকে প্রাসঙ্গিক ভিডিও ডাউনলোড করে বা আপনার নিজের ধারণকৃত ভিডিও আপলোড দিতে পারেন ফেসবুকে। খ্রিস্টীয় শিক্ষার বিষয়ে শর্ট ফ্লিম, ধর্মীয় গান, কাটুর্ন ভিডিও’র বিষয় বস্তু হতে পারে।
আটিকেল লিখে: এখন অনলাইনের যুগ। প্রায় সব পত্রিকারই রয়েছে অনলাইন ভার্সন। আপনার লেখা কোন অনলাইন পত্রিকা বা জার্নালে প্রকাশিত হলে সেই লেখার লিংক আ ইউআরএল আপনি আপনার ফেসবুক পেজে সেটা পোষ্ট করে পাবলিশ দিতে পারেন। এতে আপনার লেখাটি পৌঁছে যাবে দেশ বিদেশে ফেসবুক ব্যবহারকীদের নিকট।
ফেনপেজের মাধ্যমে: ধরুন, আপনি কোন ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত। আপনার ধর্মপল্লীর নামে ফেসবুকে একটি ফেনপেজ খুলে তাতে ছবি, সংবাদ, উপদেশ, ভিডিও, লেখা আপলোড দিলেন। এতে আপনার এলাকার মানুষ সেই ফেনপেজের সাথে যুক্ত হবেন এবং আপডেট থাকবেন। কেউ যদি কোন রবিবারে গির্জায় যেতেও না পেরেন, তবে সেই পেজ থেকে উপদেশ বাণী হৃদয়ে ধারণ করতে পারবেন। সেই পেজে আপনি আরো প্রয়োজনীয় কনটেন্ট আপলোড দিতে পারেন মানুষের আধ্যাত্মিক যতেœর জন্য।
ইউটিউব: এটি ভিডিও শেয়ারিং ওয়েবসাইট। সার্চ ইঞ্জিন গুগলের পরে সবচেয়ে বেশি মানুষ ইউটিউবে ভিজিট করে থাকেন। ভিডিও আপলোপ, ভিডিও দেখা, শেয়ার দেওয়া, কমেন্ট করা সহ বিভিন্নভাবে ব্যবহার করতে পারেন এটি। তবে বেশি সুবিধা পেতে একটি জি-মেইল ই-মেইল একাউন্ট থাকতে হবে এবং ইউটিউব নিবন্ধন করতে হবে। গুগলের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গুগলের মত সার্চ ইঞ্জিন হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে ইউটিউব। এখানে ধারণকৃত ভিডিও আপলোড করে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের নিকটে পৌঁছে দেওয়া যায় খ্রিস্টীয় শিক্ষা। আবার এই ইউটিউব এর লিংক ফেসবুক সহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও পাবলিশ করা যায়। ফেসবুকের মত অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনার লেখা, ছবি ভিডিও আপলোড করে পাবলিশ করতে পারেন। তবে সতর্ক থাকতে হবে, পোষ্টে কেউ যদি ধর্মীয় উস্কানিমূলক মন্তব্য করে থাকেন তাহলে তা ডিলেট করতে হবে।
সূত্র : বিডি খ্রিস্টান নিউজ