শাস্তির মেয়াদ বাড়িয়েই দ্রুত বিচার আইন পাসের সুপারিশ সংসদীয় কমিটির
আসাদুজ্জামান স¤্রাট : শাস্তির মেয়াদ বাড়িয়ে বহু আলোচিত দ্রুত বিচার আইন সংশোধন করে সংসদে উত্থাপিত বিলটি পাস করার সুপারিশ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। গতকাল রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিলটি চূড়ান্ত করা হয়।
গত ২২ জানুয়ারি ‘আইনশৃঙ্খলা বিঘœকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) (সংশোধন) আইন- ২০১৮’ সংসদে উত্থাপন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন। পরে বিলটি ৭ দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দিতে সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে অপরাধের শাস্তি ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ৭ বছর করা হয়েছে। এছাড়া এই আদালতে ‘বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত একজন প্রথম শ্রেণীর হাকিম’ নিয়োগের ক্ষমতা সরকারকে দেয়া হয়েছে।
বিলে ২০০২ সালের আইনের ৪(১) ধারা সংশোধন করে শাস্তির মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ওই ধারায় ‘আইন-শৃঙ্খলা বিঘœকারী অপরাধ’ এর জন্য এতদিন সর্বনিম্ন দুই বছর এবং সর্বোচ্চ ৫ বছর সশ্রম কারাদ-ের পাশাপাশি অর্থদ-ের বিধান ছিল। সংশোধিত আইনের খসড়ায় তা বাড়িয়ে সর্বনিম্ন দুই বছর ও সর্বোচ্চ ৭ বছর সশ্রম কারাদ- এবং অর্থদ-ের বিধান রাখা হয়েছে।
আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি ‘আইনশৃঙ্খলা বিঘœকারী অপরাধ’ করলে দ্রুত বিচার আইনে তার বিচার হবে। যেমন ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বা বেআইনি বল প্রয়োগ করে কোনো ব্যক্তি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চাঁদা, সাহায্য বা অন্য কোনো নামে অর্থ বা মালামাল দাবি বা আদায় বা আদায়ের চেষ্টা করলে তা এ আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
এছাড়া স্থল, রেল, জল বা আকাশপথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা, ইচ্ছের বিরুদ্ধে যানের গতি ভিন্নপথে পরিবর্তন করা, ইচ্ছাকৃত কোনো যানবাহনের ক্ষতি করা; ইচ্ছাকৃতভাবে সরকার, ব্যক্তি বা কোনো প্রতিষ্ঠানের স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি ভাংচুর করাসহ নয় ধরনের অপরাধের জন্য এই আইনের অধীনে সাজা দেওয়া যাবে। প্রস্তাবিত আইনে আদালত গঠনের বিধানেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিদ্যমান আইনের ৮(২) ধারায় বলা হয়েছে, ‘সরকার কর্তৃক নিযুক্ত একজন প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটকে নিয়ে আদালত গঠিত হবে।’ সংসদে উত্থাপিত বিলে বলা হয়, ‘সরকার বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রপ্ত একজন প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটকে উক্ত আদালতের বিচারক নিযুক্ত করিবে।’
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ২০০২ সালে দ্রুত বিচার আইন জারি করে দুই বছরের জন্য তা কার্যকর করা হয়। এরপর বেশ কয়েক দফা ওই আইনের মেয়াদ বাড়ায় সরকার। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৩ এপ্রিল এই আইনটি সংশোধন করে ৫ বছরের জন্য মেয়াদ বাড়ায় বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে মাধ্যমে গঠিত বর্তমান দশম সংসদে পাস হওয়া প্রথম বিল ছিল সেটি। এবার সংসদে তোলা বিলে মেয়াদ বাড়ানোর কথা বলা হয়নি। ফলে আইনটি ২০১৯ সালের ৭ এপ্রিল পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
সংসদীয় কমিটির সভাপতি টিপু মুন্সীর সভাপতিত্ব কমিটির সদস্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন, আবুল কালাম আজাদ, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এবং ফখরুল ইমাম গতকাল রোববারের বৈঠকে অংশ নেন।