রেখে গেছেন তার অসীম সাহসের অনেক গল্প-স্মৃতি আর আদর্শ
মো. সাজ্জাদ হোসেন
১৯৯৬ সালের ২৯ জানুয়ারি। অনার্স পরীক্ষা দিয়ে বাড়িতে এসেছি। ঘুমাই আব্বার সাথে তারই খাটে। এখানে বলে রাখা ভাল আব্বা তার খাটে শুধু আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে শুতে দিতেন না। তাই বাড়িতে থাকলে আমি আববার সাথেই ঘুমোতাম। অনার্স পড়াকালীন আমাদের গ্রামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেই। আমাদের উদ্যোগেই বর্তমান শংকুচাইল ডিগ্রী কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। কলেজ প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে গ্রামের মানুষদের মধ্যে প্রচন্ড দলাদলি ও কোন্দলের সুচনা হয়। আমরা ছিলাম পূর্ণাঙ্গ একটি স্বতন্ত্র কলেজ প্রতিষ্ঠার পক্ষে আরেকটি পক্ষ চেয়েছিল শংকুচাইল স্কুলকে ‘স্কুল এন্ড কলেজ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে। এই দ্বন্ধ শেষ পর্যন্ত মামলা মোকদ্দমা পর্যন্ত গড়ায়। অপর পক্ষ আমাদের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলাও দায়ের করে। যার দুই নম্বর আসামী করা হয় আমাকে। ২৯ জানুয়ারি ছিল ওই মামলার শুনানীর তারিখ। তাই আমি মামলায় হাজিরা দিতে ২৮ জানুয়ারি কুমিল্লা শহরে চলে যাই। উদ্দেশ্য ছিল মামলার হাজিরা দিয়ে আদমজীতে বোনকে দেখতে যাব। সকালে একটু আগেভাগেই ঘুম থেকে উঠে আদালতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। তখন সকাল ৯টার মতো বাজে। দেখি আমার সাথে দেখা করতে এসেছেন আমার এক চাচাতো ভাই (সুলতান ভাই)। তিনি আমাকে বললেন এখনি বাড়িতে যেতে হবে। আমি বললাম, আমারতো হাজিরা আছে। কিন্তু তিনি আমাকে বললেন, আজ হাজিরা দিতে হবে না, বাড়িতে অনেক বড় ধরনের সমস্যা হয়েছে। আমি তখনও জানি না, আব্বা আমাদের ছেড়ে চিরদিনের জন্য পরপাড়ে পাড়ি জমিয়েছেন। যাক উনার সাথে বাড়িতে চললাম। বাড়িতে ঢুকতে গিয়ে মূল রাস্তা থেকেই অনেক মানুষের ঝটলা দেখতে পেলাম। সবাই আমার দিকে কেমন করে যেন তাকাচ্ছে। ঠিক এতিমদের প্রতি যেমন দয়া বা করুনার দৃষ্টিতে মানুষ তাকায়। আমি তখন কিছুটা আঁচ করতে পারলাম। বাড়িতে ঢুকেই দেখি উঠুনে খাটিয়াতে সাদা কাপড় জাড়িয়ে আমার আব্বাকে শুইয়ে রাখা হয়েছে। যেই খাটে অন্য কারো শেয়ার করার সুযোগ নেই। আব্বা সেদিন যাত্রী হলেন অন্তিম যাত্রায়। পেছনে রেখে গেছেন তার অসীম সাহসের অনেক গল্প-স্মৃতি আর আদর্শ। যেগুলো এখন আমার চলার পথের পাথেয়।
আপনারা আমার আব্বার জন্য দোয়া করবেন। তিনি যেন পরপাড়ে শান্তিতে থাকেন।
লেখক : সাংবাদিক ও সভাপতি, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ