‘লজ্জা’ অপরাধ দমনে সহায়ক মুফতী মুজাহিদ সরকার
লজ্জা মুমিনের অলঙ্কার। লজ্জা ও সম্ভ্রম মানুষের এমন একটি স্বভাবজাত গুণ যার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে বহুবিদ চারিত্রিক ও নৈতিক গুণাবলীর সমাবেশ ঘটে। লজ্জাশীলতার কারণেই মানুষের মধ্যে স্বচ্ছতা ও নির্মলতার বিকাশ ঘটে, জবাবদিহিতার আগ্রহ তৈরী হয়, এমনকি লজ্জা বা সম্ভ্রমের কারণে যাবতীয় জটিলতা, কুটিলতা, পাপ-পঙ্কিলতা ও মলিনতা থেকে মুক্ত থাকা যায়। লজ্জাশীলতার লক্ষেই দায়িত্বশীলতা বোধ হয়, সামাজিকতা রক্ষা হয়, বিবেক সর্বদা চতুর থাকে একমাত্র লজ্জার অনুপ্রেরণায়।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “লজ্জা ঈমানের একটি বিশেষ শাখা” (বুখারী, মুসলিম ও মিশকাত) লজ্জা যে ঈমানের বিশেষ শাখা শুধু তাই নয়, বরং আল্লাহ তায়ালা নিজেও এ গুণে গুণান্বিত। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, তোমাদের প্রতিপালক লজ্জাশীল, পরম দয়ালু। বান্দা যখন তাঁর দরবারে উভয় হাত উঠায়, তখন তিনি বান্দার খালি হাত ফেরত দিতে লজ্জাবোধ করেন। (তিরমিযি, আবূ দাউদ ও মিশকাত)
লজ্জা বা শরম মানুষকে সকল অনিষ্ট কাজ থেকে রক্ষা করে। লজ্জাহীন মানুষ সব সময় বিরামহীনভাবে মন্দ কাজ করতে পারে, তার দ্বারাই হতে পারে যুগ শ্রেষ্ঠ জঘন্য অপরাধ, সেই পারে করতে চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, অন্যের সম্ভ্রম নষ্ট, সতিত্যহীনতা, বেহায়াপনা ইত্যাদি। কোন কিছু তাকে মন্দ কাজ থেকে ফেরাতে পারে না, রাষ্ট্রীয় আইনও না শরয়ী আইনও না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন “লজ্জা শরম না থাকলে তুমি যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে” (বুখারী ও মিশকাত) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও অধিক লজ্জাশীল ছিলেন। যে জিনিসই তার কাছে চাওয়া হত, তিনি তা দিয়ে দিতেন। হযরত আনাস রা. বলেন, তিনি কুমারী অপেক্ষা অধিক লজ্জাশীল ছিলেন। তিনি যখন কোন কিছু অপছন্দ করতেন, তখন আমরা তার পরিত্র চেহারা দেখেই বুঝে ফেলতাম।
পরিশেষে লজ্জাশীলতার বিষয়ে বিশ্বনবীর ছোট একটি উপদেশ যা উম্মতে মুহাম্মদির জন্য অত্যন্ত জরুরি। তা হল বিশ্বনবী একদিন এক আনছারী সাহাবীর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। ওই সময় তার ভাই তাকে বেশি লজ্জাশীল না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছিলেন। কারণ জীবিকা অন্বেষণ ও ইলম অর্জনের জন্য ক্ষতিকর। এ কথা শুনে বিশ্বনবী বললেন, তাকে এভাবে থাকতে দাও। যেহেতু লজ্জাশীলতা ঈমানেরই একটি অঙ্গ। (বুখারী ও মিশকাত হাদীসটি হযরত ওমর রা. বর্ণনা করেন) তবে সত্য প্রকাশে লজ্জাবোধ করলে চলবে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আর আল্লাহ সত্য কথা বলতে সংকোচ করেন না” (সূরা আহযাব আয়াত ৫৩)