নির্বাচনকে ঘিরে রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের সম্ভাবনা
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার রায়ের দিন ৮ ফেব্রুয়ারি যতোই ঘনিয়ে আসছে সব মহলে সংশয়, সংঘাতের পাশাপাশি কৌতুহল বাড়ছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ইতোমধ্যে পাল্টাপাল্টি হুঁশিয়ারি দিচ্ছে। সব কিছু মিলিয়ে দেশের রাজনীতিতে এক ধরনের চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, রায়ের আগে যতো অস্থিরতা ও উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে, শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি সংঘাতে রূপ নেওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে এই রায় নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ বাড়ছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এই রায়ে রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ ঘটবে।
আওয়ামী লীগ দলীয় সূত্র জানিয়েছে, রায়ের দিন বিএনপি যেনো মাঠে দাঁড়াতে না পারে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত দলীয় নেতাকর্মীদের সক্রিয় থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে রাজনৈতিকভাবে এই রায়ে খালেদা জিয়ার সাজা হলেও আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির জন্য বিষয়টি ইতিবাচক হবে বলে মনে করছে আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী মহল।
আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন, রায়ে খালেদা জিয়ার সাজা না হলেও বিএনপির জন্য ইতিবাচক আর সাজা হলেও নির্বাচনের আগে দলটি ‘সিমপ্যাথি’ পাবে। সেই ক্ষেত্রে আগামী নির্বাচনে বিএনপির পক্ষে নীরব সমর্থন বাড়বে। তিনি বলেন, দল প্রাথমিকভাবে ৮ তারিখে যেনো বিএনপির বড় ধরনের কোনো ‘শো ডাউন’ করতে না পারে সেটি সামাল দেওয়ার প্রস্তুতি রেখেছে। রায়ের পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, ৮ ফেব্রুয়ারি কোনো সংঘাতে যাবে না বিএনপি। কারণ রায়ে খালেদা জিয়ার সাজা হলেও বিএনপির পক্ষেই জনগণের অবস্থান হবে। আর সাজা হলেও বিএনপির পক্ষেই যাবে। কারণ এরই মধ্যে দেশে এবং বিদেশে এই রায় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। খালেদা জিয়ার এই মামলার রায় নিয়ে আওয়ামী লীগকেই জবাবদিহি করতে হবে। রায়ে বেগম জিয়া খালাস পেলে আওয়ামী লীগ সরকারের নীতিগত পরাজয় ঘটবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, রায় নিয়ে বিএনপি যে সংঘাতে যাবে না, তা দলের চেয়ারপারসনই নির্দেশ দিয়েছেন। তবে রায়ে দলীয় প্রধানের সাজা হলে, কিছুটা উত্তেজনা হবে এটা খুবই স্বাভাবিক। তবে রায় যাই হোক আগামী নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ হবে। বিএনপি এক ধরণের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। তবে এই রায়কে ঘিরে সব মহলে কৌতুহল বাড়ছে। সবার নজর এখন আদালতের দিকে। বিশেষ করে গত শনিবার বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক থেকে নির্দেশনা এবং সিলেটে খালেদা জিয়ার সফরকে ঘিরে এক ধরণের ধারণা তৈরি হয়েছে, খালেদা জিয়ার হয়তো বা সাজার জন্য প্রস্তুত। তাই তিনি সিলেট থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ বলেছেন, আওয়ামী লীগ বিএনপিকে অস্তিত্বহীন করার পাঁয়তারা নিয়ে নেমেছে। কিন্তু কাজটা সহজ হবে না। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে মানুষ এর জবাব দেবে। তাই সরকার খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার ছক তৈরি করেছে।
আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, আদালত রায় দেবেন। এখানে আওয়ামী লীগের কোনো ভূমিকা নেই। আর রায়কে ঘিরে কোনো বিশৃঙ্খলা করলে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তার জবাব দেবে। আওয়ামী লীগ জনগণের দল, কোনো বিশৃঙ্খলা হলে তা প্রতিহত করা হবে।