প্রকৃতির ওপরেই নির্ভরশীল আমের উৎপাদন, মুকুল ঝরে ফলন কম হয় ৫ লাখ টন
মতিনুজ্জামান মিটু : এখনো প্রায় প্রকৃতির ওপরেই নির্ভরশীল আমের উৎপাদন, কুয়াশা ও ঠান্ডার প্রকোপে মুকুল ঝরে বছরে গড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টন আম থেকে বঞ্চিত হয় দেশ। অথচ সময়মতো সঠিক ব্যবস্থাপনায় শতভাগ ক্ষতিই রোধ করা সম্ভব বিশ্বের অষ্টম আম উৎপাদনকারী এই দেশের। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের উপ প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ মো. নূরুল ইসলাম বলেন, বিরুপ আবহাওয়ার কারণে মুকুল পর্যায়ে দেশে বছরে গড়ে ২৫ থেকে ৩৫ ভাগ আম নষ্ট হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার উইং-এর হিসেবে বিগত কয়েক বছরে দেশে গড়ে ২০ লাখ মেট্রিক টন আমের ফলন হয়। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমির প্রায় ২ কোটি গাছে বিভিন্ন জাতের আম উৎপাদন হয় ২০ লাখ ২৩ হাজার ৯০২ মেট্রিক টন। বিগত বছরগুলোর পর্যালোচনায় দেশে বছরে গড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টন আম কম উৎপাদন হয়। কুয়াশা ও ঠান্ডায় পাতা শোষক পোঁকা ও ছত্রাকের কারণে মুকুল পর্যায়ে এই ক্ষতি হয়ে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আক্রান্ত গাছের শতভাগ আমই নষ্ট হতে পারে। সময়মত সঠিক পরিচর্যা ও ব্যবস্থা নিলে আক্রান্ত গাছের শতভাগ আমই ঠেকানো যায়। তবে দেশের অন্তত ৮০ ভাগ বসতবাড়ির আম গাছে কুয়াশা এবং ঠান্ডার ক্ষতি রোধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না এবং করা হয় না প্রয়োজনীয় স্প্রে। সচেতনতার অভাব এবং হাতের কাছে সঠিক ওষুধ ও দরকারি মেশিন না পাওয়ায় বসতবাড়ির মালিকেরা সাধারণত কুয়াশা ও ঠান্ডার ক্ষতিরোধে কোনো ব্যবস্থা নেন না। মুকুল আসার পর থেকে আম সংগ্রহের আগ পর্যন্ত ৩ বার স্প্রে করা দরকার। প্রতিবারে একটি গাছের জন্য ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দামের ৫০ মিলিলিটার ওষুধ স্প্রে করতে হয়। তার ওপর অনেক ক্ষেত্রে গ্রামগঞ্জে সঠিক ওষুধ পাওয়া যায় না। কখনোবা পয়সা দিয়ে নকল বা ভেজাল ওষুধ কিনে প্রতাড়িত হতে হয়। এছাড়া উঁচু আম গাছে স্প্রে করতে দরকার হয় মেশিন। বর্তমানের বাজারে যার প্রতিটির দাম ৬ হাজার থেকে ১৪ হাজার টাকা। চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া এসব যোগাড় করে গাছের আম রক্ষার মানসিকতা ও সঙ্গতি অধিকাংশ বসতবাড়ির মালিকেরই থাকে না। তাই প্রতি বছর মুকুলেই ঝরে যায় লাখ লাখ টন আম। বর্তমানে দেশের শতভাগ বাণিজ্যিক বাগান, পার্বত্য ও রাজশাহী অঞ্চলের শতভাগ বসতবাড়ি এবং উত্তারাঞ্চলের কিছু কিছু বসতবাড়ির গাছে আমের ক্ষতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। অন্যান্য বারের মতো এ বছরেও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার উইং-এর পক্ষ থেকে কুয়াশা ও ঠান্ডার ক্ষতিরোধে মাঠ পর্যায়ে দরকারি পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। সম্পাদনা : আনিস রহমান